ঈদের আগেই বড় বোনের সঙ্গে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তুলির

দেশ জুড়ে

পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা নেই। তাই বাধ্য হয়েই ল’কডাউ’নে স্কুল বন্ধ থাকায় বড় বোনের সঙ্গে কিছু টাকা উপার্জন করতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় শ্রমিকের কাজ নেয় হবিগঞ্জের তুলি আক্তার।

 

 

স্বপ্ন ছিল উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে দেশের জন্য কিছু করার। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পুরণ হল কই। কারখানার ভ’য়া’বহ আ’গু’ন স্বপ্ন পু’ড়ে ছা’ই করার পাশাপাশি তুলিকেও করে দিয়েছে অ’ঙ্গার।

তুলি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার ভাদিকারা গ্রামের আব্দুল মন্নানের কন্যা। সে কালাউক উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।

 

 

জানা যায়, তুলি আক্তার গত ৩০ জুন স্কুলে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়। কিন্তু ল’কডা’উনে স্কুল বন্ধ থাকায় পরিবারের স্বচ্চলতা আনতে ওই দিনই বড় বোন লিমার সঙ্গে কাজ করতে নারায়ণগঞ্জ যায় সে।

কথা ছিল কুরবানির ঈদের আগেই তাদের বাড়ি ফেরার। কিন্তু বাড়ি ফেরার আগেই তাতে বাঁ’ধসা’ধে আ’গুন। ভয়া’বহ সেই আ’গুন ছোট বোনকে অ’ঙ্গার করলেও কোনো রকম কারখানা থেকে বেরিয়ে এসে জীবন র’ক্ষা হয়েছে বড় বোন লিমার।

 

 

এদিকে, কারখানায় আ’গুন ম’রে যাওয়া শ্রমিকদের শনা’ক্ত করতে না পারায় এখনও আশায় বু’ক বে’ধে আছে তুলির পরিবার। যদিও সেই আশা একেবারেই ক্ষী’ণ। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এরই মধ্যে কারখানার নি’খোঁ’জ ৫২ জনের নাম প্রকাশ করেছে। সেই তালিকায় নাম রয়েছে নি’খোঁজ তুলি আক্তারের।

 

 

নি’খোঁজ তুলি আক্তারের বড় বোন হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের শিক্ষার্থী জুহি আক্তার জানান, আমরা ৬ বোন ও ২ ভাই। এদের মধ্যে তুলি ৫ নম্বর।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুবাধে তুলি ও লিমা কিছু টাকা উ’পার্জ’নের জন্য কাজে গিয়েছিল। কথা ছিল তাদের ঈদের আগেই বাড়ি ফেরার। কিন্তু কারখানায় আ’গুন আমাদের সবকিছু শেষ করে দিয়েছে।

 

 

তিনি বলেন, কারখানায় আ’গুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে লিমা নিচ তলা থেকে তাৎক্ষণিক বেড়িয়ে আসে। কিন্তু তুলি চতুর্থ তলায় থাকায় সে আসতে পারেনি। এর পর থেকে তার কোনো স’ন্ধা’ন মিলছে না। তুলির বাবা আব্দুল মান্নান বলেন, আমার পরিবার আ’র্থিক ভাবে অ’স্বচ্ছল। তাই আমার মেয়েরাই ছিল আমার পরিবারের সব।

তারাই লেখা পড়ার পাশাপাশি সংসার চলাতো। উপা’র্জন করত অর্থ। কিন্তু এভাবে আমার ছোট্ট তুলির স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে কোনদিন ভাব’তেও পারিনি।

 

 

এই বলে তিনি বার বার কা’ন্নায় ভে’ঙে পড়ছিলেন এবং সরকারের কাছে সহযোগীতা কামনা করেছেন। কারখানা থেকে বেঁচে ফেরা লিমা আক্তার বলেন, আমি আর তুলি এক সঙ্গে কারখানায় কাজ করতে গিয়েছিলাম। তুলি ৪ তলায় ছিল। আমি নিচ তলায়। আ’গুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে আমি বেড়িয়ে আসলেও তুলির কোনো খোঁ’জ পাইনি।

 

 

তিনি বলেন, আমি স্বপ্নেও ভাবিনি যে এক সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ছোট বোনকে এভাবে হারাব। জানা গেছে, সেজান জুস কারখানায় প্রায় সাত হাজার শ্রমিক কাজ করেন। সাততলা ভবনে থাকা কারখানাটির নিচ তলার একটি ফ্লোরের কা’র্টন থেকে হঠাৎ আগুনের সূ’ত্রপা’ত ঘটে। এক পর্যায়ে আগুন পুরো ভবনে ছ’ড়িয়ে পড়ে।

 

 

এ সময় কালো ধোঁ’য়ায় কারখানাটি অন্ধ’কার হয়ে যায়। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা ছোটাছুটি করতে শুরু করে। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। আবার কেউ কেউ ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে শুরু করেন।

শনিবারও অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন কারখানাটির সামনে। ফায়ার সার্ভিসের কাছে ৫২ জনের নি’খোঁজের তথ্য লিপিব’দ্ধ করেছেন স্বজনরা।

 

 

যাদের নাম নি’খোঁজ তালিকায় আছেন তাদের বেশির ভাগই কাজ করতেন চারতলায়। চেনার মতো অবস্থা নেই উ’দ্ধার হওয়া ৪৯টি মরদেহের। যাদের নাম এ তালিকায় এসেছে তাদের বেশির ভাগ মানুষই হয়তো ফিরে আসবেন না আর।