bdnews1971

ষড়’যন্ত্রমূলক মাম’লা থেকে সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতি দিল আদালত

জাতীয় বাংলাদেশ

ষড়’যন্ত্রমূলকভাবে দায়ের করা মোসারাত জাহান মুনিয়ার আত্ম’হ’ত্যা প্ররোচনার মা’মলা থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে যৌক্তিক কারণ না থাকায় খারিজ করা হয়েছে বাদী নুসরাত জাহান তানিয়ার করা পুলিশ প্রতিবেদনের ওপর দেওয়া নারাজির আবেদন। বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী এই আদেশ দেন। এর আগে মঙ্গলবার মা’মলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার ওসি আবুল হোসেনের দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বাদী পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত পরবর্তীতে আদেশের জন্য রেখে দেয়।

 

সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতের দেওয়া আদেশের পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিবাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তুহিন হাওলাদার বলেন, ‘সায়েম সোবহান আনভীর দেশের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী এবং শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। দেশে-বিদেশে তাঁর ব্যাপক সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে। তাঁর সুনাম ক্ষুণ্ন করা ও বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবসায়িক ক্ষতিসাধনের হীনউদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ

ষড়’যন্ত্রমূলকভাবে তাঁকে এই মা’মলায় ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশ দীর্ঘ তিন মাসের তদন্তে আ’সামি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে অভিযোগের পক্ষে গ্রহণযোগ্য কোনো প্রমাণ পায়নি। পুলিশ প্রতিবেদন গ্রহণ ও আদালতের আদেশে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে এই চক্রান্তে বাদী নুসরাত জাহান তানিয়ার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল রাষ্ট্রবিরোধী দেশি-বিদেশি শক্তিশালী চক্র। যারা দেশের গণতন্ত্র চায় না, উন্নয়ন চায় না তারা এসব চক্রান্তে শামিল হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তারা নানাবিধ

কুৎসা ও অপপ্রচারে লিপ্ত হয়। বাদী নুসরাতও সরাসরি এসব টকশো ও অনলাইন সভায় যোগ দিয়ে নানা অপপ্রচার করেন। বুধবার আদালতের আদেশে বসুন্ধরার এমডি অব্যাহতি পাওয়ার মধ্য দিয়ে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

 

আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, ‘মা’মলার তদন্তে আ’সামির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় আ’সামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করে গুলশান থানা পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এই প্রতিবেদন দীর্ঘ পর্যালোচনা করে গ্রহণ করা হলো। একইসঙ্গে যৌক্তিক কারণ না থাকায় বাদিনীর নারাজির আবেদন খারিজ করা হলো। আ’সামিকে মা’মলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।’

জানা গেছে, মাম’লার বাদী অভিযোগের পক্ষে কোনো দালিলিক, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, মৌখিক বা আইনানুগ সাক্ষ্য বা ঘটনার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারায় মাম’লার তদন্ত কর্মকর্তা গত ১৯ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট)

দাখিল করেন। পুলিশ প্রতিবেদনে মুনিয়ার আ’ত্মহ’ত্যা প্ররোচনার মা’মলার অভিযোগ থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এরপর আদালত এই প্রতিবেদনের ওপর গত ২৯ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করে।

 

একই সঙ্গে মা’মলার বাদীকেও ধার্য তারিখে আদালতে হাজির থাকার নোটিস পাঠানো হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে লকডাউনজনিত কারণে ওইদিন আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয় ১৭ আগস্ট মঙ্গলবার। নির্ধারিত দিনে ‘মলার

বাদী নুসরাত জাহান তানিয়ার পক্ষে আইনজীবী মাসুদ সালাউদ্দিন চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন দাখিল করেন। বাদিনী নারাজির পক্ষে আদালতে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। আদালত বাদীর বক্তব্য মনোযোগসহকারে শোনার পর নথি পর্যালোচনা করে পুলিশের দাখিল করা প্রতিবেদন গ্রহণ করে।

 

আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা বলেন, ‘এই আদেশের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো, মুনিয়ার আ’ত্মহত্যা’র প্ররোচনার জন্য যাকে আ’সামি করা হয়েছে তিনি আদতেই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। আ’ত্মহ’ত্যা’র প্ররোচনার কোনো ঘটনা এখানে ঘটেনি।’

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হোসেন নিজেই মা’মলাটির তদন্ত করেন। দীর্ঘ তিন মাস তদন্ত করে পুলিশ বাদীর অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে বলা হয়, এই আ’ত্মহ’ত্যা প্ররোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট আ’সামির কোনো দায় পাওয়া যায়নি।

 

আদালতে পুলিশের দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, মা’মলাটি তদন্তকালে সংগৃহীত প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন, ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ঘটনাস্থল ফ্ল্যাট মালিকসহ অন্য সাক্ষীদের জবানবন্দি নেন। এমনকি তদন্ত কর্মকর্তা মুনিয়ার

 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা বোর্ডে গিয়েও তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এসব তদন্তকালে তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিমের যাপিত জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলিও সংগ্রহ করেন। সার্বিক তদন্তে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মা’মলার বাদিনী কর্তৃক ভিকটিমের আ’ত্মহ’ত্যার সহায়তা বা প্ররোচনার অভিযোগের বিষয়ে কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণ পাননি তদন্ত কর্মকর্তা। এমনকি বাদিনী নিজেও তদন্ত কর্মকর্তার কাছে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। গোটা

তদন্ত কার্যক্রম তদারকি করেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর মহানগর হাকিম আদালতও সময় নিয়ে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করেন। এরপর আ’সামিকে অব্যাহতির আদেশ দেন।’

 

উল্লেখ্য, গত ২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি বাড়ি থেকে কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার উজিরদিঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার দিন একটি বিলাসবহুল পাজেরো জিপে করে কয়েকজন আইনজীবী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ

গুলশান থানায় হাজির হন তার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। তারা পুলিশের ওপর নানামুখী চাপ তৈরি করে এবং প্রাথমিক তদন্ত না করেই তড়িঘড়ি করে ‘আ’ত্মহ’ত্যার প্ররোচনা’ দেওয়ার অভিযোগ এনে গুলশান থানায় একটি ‘মা’মলা করেন। মা’মলার অভিযোগে প্রাথমিক তদন্ত ছাড়াই বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিকে আ’সামি করে মা’মলা নেয় পুলিশ। মা’মলার পরপরই বিভিন্ন টেলিভিশন টকশো ও অনলাইন প্ল্যাটফরমে বাদী এবং তার সহযোগীরা বসুন্ধরা

 

গ্রুপের এমডিসহ বিভিন্ন জনকে জড়িয়ে ষড়যন্ত্র ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকে। কোনো অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই তারা আ’সামি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ শুরু করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুনিয়ার চ্যাটিংয়ের কয়েকটি স্ক্রিন শট ছড়িয়ে পড়ে। এসব স্ক্রিন শটে দেখা যায়, নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন হোয়াটসঅ্যাপে মুনিয়াকে লিখেছেন, ‘তুমি কিছু করলে বসুন্ধরা গ্রুপ শেষ হয়ে যাবে।’ এ ছাড়া মুনিয়া বিভিন্ন

 

জনকে ব্ল্যাকমেল করে টাকা দাবির কিছু স্ক্রিন শটও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়াও মুনিয়া ও মা’মলার বাদী নুসরাতের সঙ্গে বিভিন্ন জনের চ্যাটিং ও ফোনের কল রেকর্ড পাওয়া যায় যেগুলোয় বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মেলে। এ ছাড়া মা’মলার বাদী নুসরাতের

সঙ্গে শারুন চৌধুরী গোপন চুক্তি করে। শারুন বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিকে ফাঁসানোর জন্য ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগের খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ কিছু গ্রুপ নুসরাতকে এই ষড়যন্ত্রে মদদ জোগায় বলে জানা গেছে।

 

এ ছাড়া গত ২৬ এপ্রিল গুলশান থানায় আ’ত্মহ’ত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মা’মলাটি হওয়ার পর থেকেই সরকারবিরোধী চক্র এখান থেকে সুযোগ নেওয়ার অপচেষ্টা করে। দেশে ও দেশের বাইরে অনলাইনে সরকারবিরোধী চক্র নানামুখী অপতৎপরতা শুরু করে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপি জামায়াত

সমর্থিত একটি চক্র মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় বিচার দাবি করে ডাকা মানববন্ধনে সরকার পতনের ডাক দেয়। ওই সমাবেশে বিএনপির অঙ্গসংগঠন মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহসভাপতি ও সূত্রাপুর থানা

 

বিএনপির সাবেক সভাপতি ফরিদ উদ্দিন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব নঈম জাহাঙ্গীর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, নাগরিক ঐক্য কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোশারফ হোসেনসহ বেশির ভাগ বিএনপির নেতাও বক্তৃতা করেন।

এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নামে একটি সংগঠন নুসরাতকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা বিষোদগার করে। একপর্যায়ে তারা পুলিশকে হুমকি দেয়। ওই সময় বাদীর আইনজীবী বলেন, ‘আমরা পুলিশের তদন্ত মানি না।

 

পুলিশ এই মা’মলার তদন্ত করার এখতিয়ার নেই।’ পরে জানা যায়, জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী ওরফে শারুনের দেওয়া টাকায় ওই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনের পরই টাকার ভাগাভাগি নিয়ে আয়োজকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়।

 

এদিকে মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় তার বড় ভাই আশিকুর রহমান সবুজ গত ২ মে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি হ’ত্যা মা’মলা দায়ের করেন। ওই মা’মলায় জাতীয় সংসদের হুইপের ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনকে আ’সামি

 

করা হয়েছে। আদালত মা’ম’লাটি আমলে নিয়ে গুলশান থানায় সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে দায়ের করা আ’ত্মহ’ত্যার প্ররোচনার মা’মলার তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত হ’ত্যা মা’মলার তদন্ত স্থগিত রাখার আদেশ দেয়। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলেন, এখন আদালতের আদেশ অনুযায়ী শারুনের বিরুদ্ধে দায়ের করা হ’ত্যা মা’মলার তদন্ত শুরু হবে।