মইয়া জালে কষ্টের জীবন

বাংলাদেশ

নিজের বয়সের হিসাব জানেন না মোতাহার সিকদার। তবে স্থানীয়রা বলছে ৮০ বছর ছাড়িয়েছেন। বয়সের ভারে অনেকটা ক্লান্ত তিনি। চলাফেরা করেন লাঠিতে ভর দিয়ে। আট সন্তানের মধ্যে বর্তমানে বেঁচে আছেন দুই ছেলে আর এক মেয়ে। ছেলেদের আলাদা সংসার। আর স্বামীর বাড়িতে মেয়ের সংসার। স্ত্রী হালিমা বেগম মারা গেছেন ছয় বছর আগে। সেই থেকে বড্ড একা তিনি। অভাব-অনটনের কারণে সন্তানরাও তাঁকে দেখভাল করতে পারেন না।

 

কিন্তু বেঁচে তো থাকতে হবে। বেঁচে থাকার সংগ্রামে প্রতিদিন তাই বৃদ্ধ মোতাহার সিকদার মইয়া জাল দিয়ে পাশের পায়রা নদীতে মাছ শিকার করেন। সেই মাছ বাজারে বিক্রি করে কোনো দিন পান ১০০ টাকা, আবার কোনো দিন দেড় শ থেকে ২০০ টাকা। আবার যখন শরীর অনেক অসুস্থ থাকে, তখন মাছ শিকার করাও সম্ভব হয় না। তখন অনেকটা খেয়ে না খেয়ে পার করেন দিন।

 

মোতাহার সিকদারের বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের গিলাবুনিয়া গ্রামে। গতকাল বৃহস্পতিবার পায়রা নদীর পারে পায়রা কুঞ্জ এলাকায় তাঁর সঙ্গে দেখা। সেখানে বাজারের পথ ধরে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি।

 

kalerkanthokalerkanthoকথায় কথায় বৃদ্ধ মোতাহার বলেন, ‘আমি জাইল্লা (জেলে)। বাপ-দাদার এই পেশা ছাড়া আর কোনো কাম জানি না। আগে জাগাজমি আছেলে, এহন কিছু নাই। রোগেশোগে সব বেইচ্চা খাইছি। খালি আছে ঘরের পোতা (ভিটি)। স্ত্রী মইরা যাওয়ার পর আমি একলা অইয়া গেছি। পেট চালাইতে জাল লইয়া গাঙ্গে যাই। একদিন হয়তো গাঙ্গের পারেই মইরা থাকমু। দুইডা পোলা আছে; হ্যাগো নিজেগোই খাওনে কষ্ট। আমারে জিগাইবে কি?’

 

বলতে বলতে গলা ধরে আসে মোতাহার সিকদারের। হাতের তালু গিয়ে ঠেকে চোখের পাতায়। বলতে থাকেন, ‘বুঝলারে ভাই, বুড়া মাইনসের শান্তি নাই। কষ্টই আমার জীবন। বিবেকে দেয় না মাইসের ধারে আত পাতি। এর লাইগ্যা নদীতে জাল পাইতা দুই-চাইর টাহার মাছ পাইলে বেইচ্চা খাই। অসুস্থ অইয়া পড়লে এলাকার মাইনসে অষুধ-বড়ি কিন্যা দেয়।’

 

কথা থামান মোতাহার। এদিক-সেদিক মুখ ঘুরিয়ে চোখের জল মুছতে থাকেন। যেন চোখের জলে ঠিকরে বের হতে চায় এই বৃদ্ধ বয়েসের সব দুঃখ-যন্ত্রণা। ইটবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জোমাদ্দার বলেন, মোতাহার সিকদারের বয়স্ক ভাতার কার্ড করা হয়েছে। দ্রুতই বয়স্ক ভাতা পাবেন তিনি।