তারুণ্যের শক্তি ও নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন

খেলাধুলা

স্রেফ এলোমেলো করে দিয়েছিল স্কটল্যান্ড। বুক ভরা আত্মবিশ্বাস যেন এক নিমিষেই শেষ! অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাওয়া ছাড়া যেন কোনো পথ নেই! কিন্তু নাহ! ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন পথগুলো সম্পর্কে জানত বাংলাদেশ। জানত কিভাবে ২২ গজে জবাব দিতে হয়, প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিতে হয়! ওমানের বিপক্ষে আত্মবিশ্বাসী জয়ের পর পাপুয়া নিউ গিনিকে উড়িয়ে বাংলাদেশের বার্তা, ‘নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন আরো দিগন্ত বিস্তৃত।’

 

সাকিব চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। দলকে শুধু উদ্বুদ্ধ করাই নয়, কিভাবে দায়িত্ব নিয়ে জেতাতে হয় তা জানেন। পুচকে ওমান ও পিএনজির বিপক্ষে দলের নায়ক হয়ে সেই প্রমাণ আরো একবার দিয়েছেন। মাহমুদউল্লাহর এবারের বিশ্বকাপ তার ক্যারিয়ারের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। অধিনায়ক দুই ম্যাচেই নিজে পারফর্ম করলেন, যোগ্য নেতৃত্ব দিলেন। তাতে হাসল টিম বাংলাদেশ। অবদান রেখেছেন বাকিরাও।

 

তবে তারুণ্যের শক্তি ফুটে উঠেছে প্রবলভাবে। নাঈম শেখ, মেহেদী হাসান, আফিফ হোসেন, সাইফউদ্দিনরা নিজেদের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বুঝিয়ে দিয়েছেন তারা লম্বা সময়ের ঘোড়া। এখানে উইকেটের পেছনের বাজপাখি কাজী নুরুল হাসান সোহানের নাম আসবে নির্দ্বিধায়। ওমানের বিপক্ষে দল যখন

 

কঠিন পরিস্থিতিতে তখন পেছন থেকে সোহানের বার্তা ছিল, ‘দুইটা ওভার ‘‘টাইট’’ দেন। দেখবেন ওরা পারবে না।’ মেহেদী তার বার্তা বুঝতে পেরে চার ওভার এমন বোলিং করলেন যে ওমানের ব্যাটসম্যানরা তালগোল পাকালো। শুধু মেহেদীই নয়, পেসার সাইফউদ্দিন যেভাবে আক্রমণ করেছেন তা ছিল ধ্রুপদী। দুইজনের আট ওভারের বোলিং স্পেলকে সাকিব তো বলেছিলেন,‘ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।’

 

ওমান ম্যাচে মেহেদী ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে পেয়েছেন ১ উইকেট। তার বোলিংয়ে ডট ছিল ১২টি। তৃতীয় উইকেটে জিশান মাকসুদ ও যতীন্দর সিংয়ের ৩৪ রানের জুটি ভেঙেছিলেন মেহেদী। এরপর তাসের ঘরের মতো ভাঙতে থাকে ওমানের ব্যাটিং অর্ডার। পাওয়ার প্লে ও ডেথ ওভার মিলিয়ে সাইফউদ্দিন

 

নিজের ৪ ওভার বোলিং করেছেন। ১ উইকেট হারানোর সঙ্গে তার বোলিং থেকে ওমান পায় মাত্র ১৬ রান। ডট বল ছিল ১৩টি। সাইফউদ্দিন পাওয়ার প্লেতেই ১ বাউন্ডারি হজম করেছিলেন। আর মেহেদী কোনো বাউন্ডারি হতে দেননি। এই ‘হাড়কিপটে’ বোলিংয়ে মেহেদী ও সাইফউদ্দিন হয়েছেন বাংলাদেশের আনসাং হিরো।

 

আফিফ হোসেন শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে ১৪ বলে ২১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে দারুণ অবদান রাখেন। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যাওয়া ম্যাচে ১২ বলে করেছিলেন ১৮ রান। এছাড়া ওমানের বিপক্ষে করেন ১ রান। শেষ দিকে দ্রুত রান তুলতে গিয়ে কখনো সফল হবেন, কখনো ব্যর্থ হবেন। ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ, চেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ। আফিফ সেই কাজটাই করেছেন প্রথম পর্বে। তার ব্যাটিংয়ের মানসিকতা এগিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশকে।

 

নাঈম শেখ ওমানের বিপক্ষে ৬৪ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেছেন। তাতে দলীয় স্কোর সমৃদ্ধ হয়েছে। তারুণ্যের এই জয়গানে বাংলাদেশের আশার সঞ্চার হয়েছে। মাহমুদউল্লাহরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন সুপার টুয়েলভেও ভালো কিছু করা সম্ভব। অধিনায়কের পূর্ণ আস্থা তাদের ওপর।

 

তিন ক্রিকেটারকে নিয়ে মাহমুদউল্লাহর মন্তব্য, ‘সাইফউদ্দিন তিনটি ম্যাচেই ভালো করেছে, আজ ব্যাটিংয়েও ভালো করেছে। মেহেদী দুর্দান্ত বল করছে। নাঈম প্রথম ম্যাচে নেমেই ফিফটি করল। ওদের পারফরম্যান্স আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক। আশা করি নাঈম ধরে রাখবে। সাইফ নতুন বলে ভালো

 

করছে, মিডল ডেথে ভালো করছে। মেহেদীও। তাদের দুজনের পারফরম্যান্স তিন ম্যাচেই আউটস্ট্যান্ডিং ছিল। এই পারফরম্যান্স আমাদেরও প্রেরণা দেয়। ইনশাআল্লাহ্ সুপার টুয়েলভে আরো ভালো পারফর্ম করবে।’

 

 

সেমিফাইনালে চোখ রেখে যে দলটা বিশ্বকাপ মিশন শুরু করল, তারা প্রথমেই স্কটল্যান্ড ধাক্কা হজম করে। আশেপাশে সব ধূসর হয়ে গেল। নিজেদের শক্তভাবে ফিরিয়ে এনে সুপার টুয়েলভের মঞ্চে নতুন এক বাংলাদেশ। তারুণ্যের শক্তিতে দলটি এবার কতদূর এগোবে সেটাই দেখার।