নয় বছরেও হয়নি কনস্টেবল মফিকুল হত্যার বিচার!

বাংলাদেশ

খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশির গোলখালী গ্রামে ৯ বছর আগে আসামি ধরতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন পুলিশ কনস্টেবল মফিকুল ইসলাম। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় আজও হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনতে না পারায় হতাশ নিহতের স্বজনরা।

জানা যায়, হত্যাকান্ডের এঘটনায় স্থানীয় আংটিহারা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই মোঃ মমিনুর রহমান বাদী হয়ে কয়রা থানায় মামলা একটি মামলা দায়ের করেন (যার নং-০৭ (৩)১৩।

এরপর কয়েক দফায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের পর সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক সরদার মোঃ হায়াত আলী ২০১৫ সালের ২১ মে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর দীর্ঘদিন স্থবির মামলাটির পরবর্তী কার্যক্রম থমকে আছে।

রীতিমতো চার্জশিটভুক্ত আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে-বেড়ানো, মামলা তুলে নিতে বাদীপক্ষকে প্রভাবিত ও দীর্ঘদিন মামলার কার্যক্রম স্থবির থাকায় পুলিশ কনস্টেবল মফিজুল হত্যার ন্যায় বিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় নিহতের স্ত্রী-সন্তানেরা।

মামলার চার্জশিটে উল্লেখিত, ২০১৩ সালের ৯ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে কয়রা থানার অপর একটি মামলার এজাহারনামীয় আসামি গনি সরদারের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এদিকে পুলিশ গনি সরদারের বাড়িতে পৌঁছানোর পূর্বেই ওই মামলার বাদীর নূরুল আমীন মোড়লের চাচাতো ভাই নাছের আলী মোড়ল, আছের আলী মোড়ল, গোলাম মোস্তফা রিপন, রউফ শেখ, তাইজুল গাজী ও দাদরিজ শেখসহ কয়েকজন গনি সরদারের বাড়িতে হাজির হয়। তাদের সঙ্গে থাকা আসামি পরিতোষ কুমার মন্ডল বন্দুক-গুলি, লাঠি- শোটা, হাতুড়িসহ অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গনি সরদারকে বাড়িতে না পেয়ে তার স্কুল পড়ুয়া শিশু সন্তান সিরাজুলকে ধরে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে।

এসময় বাড়ির মহিলা ও শিশুরা ডাক-চিৎকার দিলে স্থানীয় মসজিদে একথা বলে প্রচার করা হলে (নাছের বাহিনীর লোকজন হামলা করেছে। তোরা কে কোথায় আছিস এগিয়ে আয়।) গোলখালী গ্রামের সাধারণ জনগণ সমবেত হয়ে হামলাকারীদের প্রতিরোধ করতে উচ্চস্বরে ডাক-চিৎকার ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।

তদন্তে প্রকাশিত, মসজিদের মাইকে প্রচার ও ব্যাপক ডাক-চিৎকারে উল্লেখিত পুলিশ ফোর্স দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এসময় আসামিরা পুলিশের পেছনে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে পুলিশ ও স্থানীয়দের মধ্যে তুমুল বাক-বিতন্ডা শুরু হলে তারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশের পেছনে আগে থেকে অবস্থান নেয়া আসামিদের মধ্যে রউফ শেখ অপর আসামি আছের আলীর কাছে থাকা বন্দুক দিয়ে ওইদিন রাত ১২টার দিকে গুলি করলে কনস্টেবল মফিজুল ইসলামের বাম পায়ের হাটুর পিছনে বিদ্ধ হয়ে মারাত্মক জখম হন তিনি।

তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার পূর্বকক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওবার পথিমধ্যে কনস্টেবল মফিজুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করেন।

এরপর গত ২০১৪ সালের ১০ জুলাই পুলিশ হেডকোয়াটার্স মনিটরিং সেলের ১৭৭তম এবং ২০১৫ সালের ৯ এপ্রিল ১৭৯তম সভায় বিস্তারিত আলোচনাতে প্রত্যেক আসামির অপরাধ শনাক্ত করে অভিযোগপত্র সুনির্দিষ্ট চার্জ এনে অভিযোগপত্র দাখিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলো, উপজেলার গোলখালীর মৃত আমির চাঁদ সরদারের ছেলে গনি সরদার, তার স্ত্রী আয়শা বেগম, ছেলে আনারুল ও সিরাজুল, মৃত মোছের আলী গাজীর ছেলে মফিজুল ইসলাম নান্নু ও রেজাউল ইসলাম (ইউপি মেম্বর), ছোট আংটিহারার মৃত মান্দার মোড়লের ছেলে নাছের আলী মোড়ল ও আছের আলী মোড়ল (ইউপি চেয়ারম্যান), নেছার মোড়লের ছেলে গোলাম মোস্তফা রিপন, গোলখালীর মৃত নওশের শেখের ছেলে রউফ শেখ, আঃ হামিদ গাজীর ছেলে তাইজুল গাজী, ছোট আংটিহারার দাউদ শেখের ছেলে দাদরিজ শেখ।

এব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল লতিফ জানান, মামলাটি উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত ছিল। পরে আবারও তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পিবিআইকে। তদন্ত চলমান। গত ৩০ মার্চ সিআইডি’র চার্জশিটভুক্ত এক আসামিকে শ্যোন এ্যারেস্ট দেখিয়ে দু’দিনের রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। বাকি আসামিদের শিগগরিই আইনের আওতায় আনা হবে।

নিহত পুলিশ কনস্টেবল মফিজুল ইসলামের ছেলে সাগর বলেন, তার পিতা হত্যা মামলাটির বাদী পুলিশ। ঘটনার মামলার মামলার বিষয়ে তাদের কিছুই জানানো হয়নি। পুলিশ সদর দপ্তরে যেয়ে শিগগিরই মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানবেন বলে বলেও জানান তিনি। এসময় নয় বছরেও আসামি ধরতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে তার পিতা পুলিশ কনস্টেবল মফিকুল ইসলাম হত্যাকান্ডের মূলরহস্য উন্মোচন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।