লোডশেডিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে বিদ্যুৎ আসে গাজীপুরে

জাতীয়

ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত শিল্পাঞ্চল জেলা হিসেবে পরিচিত গাজীপুর। দিন-রাত মিলিয়ে কোনো কোনো এলাকায় ৮-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে না। আসা-যাওয়ার মধ্যেই ব্যস্ত থাকে বিদ্যুৎ। লোডশেডিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে বিদ্যুৎ আসে।

এতে বিভিন্ন শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বার বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার কারণে নষ্ট হচ্ছে ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, ফ্যান, আইপিএসসহ বিভিন্ন ইলেকট্রিক ডিভাইস। তীব্র গরমেও বিদ্যুৎ না পেয়ে জনজীবন অতিষ্ট। জনমনে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ।

তবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দাবি, বিদ্যুৎ সরবরাহ চাহিদা অনুযায়ী না থাকায় সারা দেশে লোডশেডিং বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এ কারণে গাজীপুরেও লোডশেডিংয়ের সময় বেড়েছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, তাদের আওতাধীন সারা দেশের গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের চাহিদা ৮ হাজার ২০০ মেগাওয়াট হলেও তারা পাচ্ছেন ৬ হাজার ৮৭৬ মেগাওয়াট। এতে লোডশেডিং হচ্ছে ১ হাজার ৩২৪ বিদ্যুৎ মেগাওয়াট। সে হিসাবে ৩০ শতাংশ লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গাজীপুর ও ময়মনসিংহের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুরের কালীগঞ্জ ও জয়দেবপুর এলাকায় কারখানা এবং অফিস-আদালতের সংখ্যা বেশি। এখানে সব মিলিয়ে গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১-এর আওতাধীন বিদ্যুতের চাহিদা ৪৫০ মেগাওয়াট। এখানে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় মাত্র ২৫৮ মেগাওয়াট। তাই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে ১৯২ মেগাওয়াট। তাই এলাকাভিত্তিক ৭-৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

অন্যদিকে গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ২-এর আওতাধীন গাজীপুর সদর উপজেলা ও শ্রীপুরের একাংশে এবং কাপাসিয়া উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৪০ মেগাওয়াট। এখানে লোডশেডিং সর্বোচ্চ ৫০ মেগাওয়াট।

এদিকে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২-এর শ্রীপুর ও মাওনা জোনাল অফিসের আওতাধীন উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৫০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ মেগাওয়াট। এখানে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে ৫০-৬০ মেগাওয়াট। এ এলাকায় দিনে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।

ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১-এর আওতাধীন কালিয়াকৈর উপজেলায় চাহিদা ২০০ মেগাওয়াট। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ১২০ মেগাওয়াট। সেখানে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে ৮০ মেগাওয়াট। সেখানে ৫ শতাধিক কারখানা রয়েছে। বিদ্যুৎ বন্ধ থাকছে ৭-৮ ঘণ্টা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূবাইল জোনের অবস্থা আরও ভয়াবহ। দিন রাতে গড়ে ৭-৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। কোনো কোনো দিন তীব্র গরমেও রাতের বেলায় দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ থাকে না। দিনে যে কতবার বিদ্যুৎ যায় তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কোনো কোনো দিন টানা ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন থাকতে হয় এলাকাবাসীর। কবে কখন লোডশেডিং থাকবে সেই তথ্যও জানে না গ্রাহকরা।

কালীগঞ্জে মোক্তারপুর, জামালপুর ও বক্তারপুর এলাকায় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ রয়েছেন মানুষ। মোক্তারপুরের কৃষক ইকবাল হোসেন বলেন, একদিকে বৃষ্টি হচ্ছে না, অন্যদিকে বিদ্যুৎ থাকে না। এবার ফসল চাষাবাদ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন রয়েছি।

একমাত্র দোকানের আয়ের ওপর সংসার চালান গাজীপুরের সদর উপজেলার হোতাপাড়া এলাকায় ওয়ার্কস ব্যবসায়ী কালাম মিয়া। তিনি বলেন, দিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। আর রাত ৮টার পর দোকান বন্ধ রাখতে হয়। ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধ করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

গাজীপুরের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর চরম বিপাকে পড়েছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদামতো তৈরি পোশাক সরবরাহ করতে না পারলে তারা ক্রয়াদেশ বাতিল করতে পারেন এবং বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য দেশের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন।

প্রান্তিক গ্রাহকদের প্রয়োজনের তুলনায় কম বিদ্যুৎ দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন জানিয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দীন যুগান্তরকে বলেন, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বর্তমানে গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সমস্যা সমাধান হবে বলে আমরা আশা করছি।