বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যে কারণে জুতা পরতেন না মোস্তফা

দেশ জুড়ে

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পায়ে জুতা পড়া ছেড়ে দিয়েছিলেন ময়মনসিংহের ফুলপুরের বঙ্গবন্ধুপাগল মো. মোস্তফা মিয়া। বিয়ের দিনও তার পায়ে কেউ জুতা পরাতে পারেনি। খালি পায়েই বিয়ের আসরে গিয়েছিলেন তিনি। এবার সেই মোস্তফা আলোচনায় এসেছেন হেঁটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত করতে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করায়। মোস্তফা মিয়া ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বাসিন্দা। উপজেলার সাহাপুর গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে তিনি।

এরই মধ্যেই অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, কেন মোস্তফা জুতা পরা ছেড়েছিলেন। সেই উত্তর খোঁজতেই যোগাযোগ করা হয় মোস্তফার ছেলে মনিরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার দাদি বঙ্গবন্ধুর খুব ভক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর আমার বাবার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন আলাপ বলছিলেন। দেশ স্বাধীনে বঙ্গবন্ধু অবদান স্মরণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন দাদি। এ সময় তার চোখের পানি মাটিতে গড়িয়ে পড়ে। সে সময় বাবাও খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে মাটিতে নিজের মায়ের চোখের পানি পড়েছে সেই মাটিতে আর জুতা পা দিয়েই হাঁটবেন না আমার বাবা। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের রায় ঘোষিত হলে ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের ৫ বারের নির্বাচিত এমপি ভাষাসৈনিক মরহুম এম শামছুল হক তাকে জুতা কিনে দেন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের অনুরোধে তিনি জুতা পরেন।

পেশায় কৃষক, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছেন। মানুষকে দেওয়ার মতো তেমন আর্থিক অবস্থা নেই মোস্তফার। তবে মনের দিক থেকে অনেক বড় মনের একজন মানুষ তিনি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য তিনি সবসময়ই নিবেদিত। সকালে ফজরের নামাজের পর থেকেই তিনি প্রতিদিন হাঁটা শুরু করতেন। হেঁটে হেঁটে খোঁজ নিতেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। মোস্তফা পয়ারি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য।

হেঁটে টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার ব্যাপারে মোস্তফার ছেলে বলেন, স্থানীয় মেয়রসহ অন্যান্য নেতারা বাবাকে বলেছিলেন মাইক্রোবাসে করে যেতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতি আবেগ-ভালোবাসা ও সম্মান থেকে হেঁটে টুঙ্গিপাড়া যাবেন বলেই সিদ্ধান্ত নেন। জানান, বঙ্গবন্ধুর কবরে দুই ফোটা চোখের পানি ফেলে তার জন্য দোয়া করবেন তিনি।

৭১ বছর বয়সী মোস্তফা গত সোমবার বাড়ি থেকে হেঁটে দুপুর ১২টার দিকে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা প্রশাসন চত্বরে এলে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পরে বিকেল ৩টার দিকে আবারো হাঁটা শুরু করেন তিনি। ওইদিন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার গোপালপুর এলাকায়, মঙ্গলবার ভালুকা উপজেলার ভরাডোবা এবং বুধবার গাজীপুরের শ্রীপুর ও বৃহস্পতিবার মাওনা এলাকায় রাতযাপন করেন। শুক্রবার সকাল থেকে ফের হাঁটছেন তিনি।