আর্থিক ক্ষতির মুখে দেশের চা শিল্প

বাংলাদেশ

ভরা মৌসুমে বাগানে বাগানে নারী চা শ্রমিকদের দু-হাত ভরে পাতা উত্তোলন আর এসব পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণে কারখানাগুলো কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত সময় পার করার কথা।

অথচ দেশের চা শিল্পে সমৃদ্ধ শ্রীমঙ্গলের চা বাগানগুলোতে এখন সুনসান নীরবতা। চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন দেশের চা শিল্প।

শনিবার অষ্টম দিনের মতো চলছে কর্মবিরতি। একদিন কাজ বন্ধ থাকলে দেশের ১৬৭টি চা-বাগানে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে জানা গেছে।

এ অবস্থা চলতে থাকলে এ বছর চায়ের কাঙ্খিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চা শিল্প সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশের চা শিল্প যখন বিশ্ববাজারে প্রভাব বিস্তার করছে তখন শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বাজারকে ঝুঁকিতে ফেলছে বলে আশংকা করছেন উদ্যোক্তারা।

চা বাগানে শ্রমের দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবি করা হলেও একজন শ্রমিক দৈনিক ১২০ টাকাসহ প্রায় ৪০৩ টাকা সমপরিমান সুবিধা পেয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।

উদ্যোক্তারা বলছেন, শ্রমিকদের সামাজিক উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন রকম সুবিধা প্রদান করা হয়। দেশের ১৬৭টি চা বাগানে বাণিজ্যিক চা উৎপাদনের সঙ্গে প্রায় দেড় লাখের বেশি লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে।

গত ১৩ আগষ্ট থেকে শ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতির কারণে সিলেট ও চট্টগ্রামের ১৬৭টি চা বাগান থেকে দৈনিক প্রায় ২০ কোটি টাকার বেশি মূল্যমানের চা পাতা নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি বাগান মালিকদের।

গত ১৬ আগস্ট শ্রীমঙ্গল থানায় চারটি চা বাগানের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি ( জিডি) করা হয়েছে।

জিডিতে শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে কাঁচা পাতা নষ্ট হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। এতে উপজেলার রাজঘাট চা বাগানে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৩৫ কেজি, ডিনস্টন চা বাগানে ৯৯ হাজার ২৫০ কেজি, বালিশিরা চা কারখানায় ৫০ হাজার ২০৭ কেজি, আমরাইল চা কারখানায় ৫ হাজার ৬৮৩ কেজি কাঁচা চা-পাতা নষ্ট হয়ে গেছে এবং এতে কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়।

এ জেলার ৯৪টি চা বাগান থেকে প্রতিদিন অন্তত ২০ থেকে ২৫ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়ে থাকে। ভরা মৌসুমে এসে আকস্মিকভাবে চা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জেলার চা শিল্প লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন চা বাগান মালিকরা।

বাংলাদেশ চা-বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে, ২০২২ সালে দেশের ১৬৭টি চা-বাগানে ৯ কোটি ৭০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা আশংকা করছেন শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে।

এ ব্যাপারে ফিনলে টি কোম্পানির ভাড়াউড়া ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা শিবলী জনান, শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে তাদের সব বাগানে চা পাতা উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান।