অভ্যর্থনার দিনে ফুটবলার আঁখির বাড়িতে কারণ দর্শানোর নোটিশ নিয়ে গেল পুলিশ

জাতীয়

সাফ গেমসে চ্যাম্পিয়ন নারী ফুটবল দলের ডিফেন্ডার আঁখি খাতুনের নামে আদালত কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। ফুটবলার আঁখিদের নিয়ে দেশব্যাপী যখন আনন্দে মাতোয়ারা, ঠিক তখনই পুলিশ কারণ দর্শানোর নোটিশটি নিয়ে আঁখির বাড়িতে হাজির হন।

আঁখিকে দেওয়া সরকারি জমি নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।

বুধবার সন্ধ্যার কিছু সময় আগে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌরসদরের পাড়কোলা গ্রামে আঁখির বাড়িতে এ ঘটনাটি ঘটেছে। এ দিন সন্ধ্যার কিছু সময় আগে শাহজাদপুর থানার এএসআই মামুনুর রশিদ ও একজন কনস্টেবল সিভিল পোশাকে এ নোটিশ নিয়ে হাজির হলে আঁখির বাড়িতে উপস্থিত লোকজনের মাঝে আনন্দ মুহূর্তে বিষাদে পরিণত হয়।

এ সময় শাহজাদপুর থানার এএসআই মামুনুর রশিদ আঁখির বাবা আক্তার হোসেনকে জানান, দ্বাবারিয়া গ্রামের মৃত মেছের প্রাংয়ের ছেলে মো. মকরম প্রাং বাদী হয়ে সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দ্বাবারিয়া মৌজায় জোরপূর্বক জমি দখলের পাঁয়তারার অভিযোগে একটি মামলা করেন। ফলে খুন-জখম হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় আদালত উভয়পক্ষকে ওই নালিশি সম্পত্তিতে স্থিতি অবস্থা বজায় রাখতে বলা হয়েছে।

এতে ফুটবলার আঁখিসহ ৫ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত আদালতের নোটিশটি স্বাক্ষর প্রদানপূর্বক গ্রহণের জন্য এএসআই মামুনুর রশিদ আঁখির বাবা আক্তার হোসেনকে অনুরোধ করলে তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে এএসআই মামুনুর রশিদ তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এতে উপস্থিত সবার মাঝে আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়। পরে বিষয়টি শাহজাদপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম ও শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, ফুটবলার আঁখির পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র হওয়ায় সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মদ শাহজাদপুর উপজেলার পৌরসদরের দ্বাবারিয়া মৌজার ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত ওই সম্পত্তির ৮ শতক জমি আঁখির নামে দলিলমূলে স্বত্ব প্রদান করেন। গত কয়েক দিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে আঁখির বাবা-মায়ের হাতে ওই জমির দলিল হস্তান্তর করেন। ফলে প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে আঁখির একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছিল। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একটি কুচক্রীমহল জাল দলিলের মাধ্যমে আদালতকে ভুল বুঝিয়ে ওই জমি দখলের পাঁয়তারা করছেন বলে আঁখির বাবা আক্তার হোসেন দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে আঁখির বাবা আক্তার হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মেয়ে আঁখিকে ওই জমি দিয়েছেন। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একটি কুচক্রীমহল জাল দলিলের মাধ্যমে ওই জমি দখলের পাঁয়তারা করছে। তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, এমন আনন্দের মুহূর্তে এ ধরনের নোটিশ নিয়ে আঁখির বাসায় যাওয়াটা ঠিক হয়নি। ওই এএসআই না বুঝে এ কাজ করে ফেলেছেন। এ নোটিশটি একদিন পরে পৌঁছে দিলেও ক্ষতি ছিল না। তবে আদালতের নির্দেশ পালনে বাধ্যবাধকতাও রয়েছে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি জানার পর এদিন রাতেই আমি ও শাহজাদপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম আঁখির বাড়িতে ফুলের তোড়া ও মিষ্টি নিয়ে গিয়ে তাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে এসেছি। এ ছাড়া এ ঘটনায় তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। ফলে বিষয়টি ওখানেই শেষ হয়ে গেছে।

এদিকে সাফ গেমসে চ্যাম্পিয়ান নারী ফুটবল দলের আঁখিসহ অন্যরা বুধবার দুপুরে কাঠমুন্ড থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালে তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। তাদের এ আগমনে সারাদেশের ন্যায় আঁখির বাড়িতেও দিনভর উৎসব-আনন্দ বিরাজ করছিল। এ নোটিশ প্রদান কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনায় মুহূর্তে তা বিষাদে পরিণত হয়।