অন্য শিক্ষকের কাছে পড়ায় নাখোশ হন রনি, বালিশচাপায় হত্যা

দেশ জুড়ে

নোয়াখালী জেলা শহরের সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসমিয়া হোসেন অদিতাকে (১৪) ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তার সাবেক গৃহশিক্ষক আবদুর রহিম রনি (৩০)। গতকাল শনিবার ১৬৪ ধারায় মুখ্য বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ এমদাদের আদালতে জবানবন্দি দেন তিন দিনের রিমান্ডে থাকা আসামি রনি। এ বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম গতকাল প্রেস ব্রিফিং করেন।

উল্লেখ্য, অদিতা মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুরের বাসিন্দা।

এসপি শহীদুল ইসলাম জানান, অন্য শিক্ষকের কাছে পড়া শুরু করায় নাখোশ হন রনি। এর জেরে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটান তিনি। গত বৃহস্পতিবার অদিতার বাসায় যান রনি। গল্পগুজব করার এক পর্যায়ে অদিতাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দেওয়ার চেষ্টা করেন রনি। এতে অদিতা বাধা দিলে রেগে যান তিনি। অদিতা বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার কথা বলে। এ সময় অদিতাকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন রনি।

এসপি আরো জানান, ঘটনার দিনই রনিকে সন্দেহ করে পুলিশ। এ ঘটনায় রনিকে প্রথমে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। তখন তাঁর থুতনি ও ঘাড়ে নখের আঁচড়ের দাগ দেখা যায়। জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। রনি পৌরসভার ৩ লক্ষ্মীনারায়ণপুর মহল্লার লাতু কমিশনারের বাড়ির খলিল মিয়ার ছেলে। রনি বর্তমানে তিন দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।

এদিকে অদিতা হত্যার প্রতিবাদে গতকালও উত্তাল ছিল নোয়াখালী। ঘটনার বিচার দাবি করে নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিক্ষোভে উত্তাল ছিল জেলার শিক্ষাঙ্গন ও রাজপথ। বিক্ষুব্ধরা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দেয়।

নোয়াখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আহ্বানে গতকাল জেলার সব সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারীরা জেলা শহরে মৌন মিছিল বের করেন। মিছিলটি নোয়াখালী প্রেস ক্লাব ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রদক্ষিণ করে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ সময় হাজার হাজার শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে মানববন্ধনে অংশ নেয়। পরে তারা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে পুলিশ সুপারের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়ে ঘটনার বিচার দাবি করে।

কর্মসূচিতে নোয়াখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মেহেরুন্নেছা, হরিনারায়ণপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল আলিম, নোয়াখালী জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর, নোয়াখালী জেলা স্কুলের শিক্ষক বেলাল হোসেন, মুহাম্মদ নাছিমুল হক এবং অদিতার সহপাঠীরা বক্তব্য দেয়।

প্রধান শিক্ষিকা মেহেরুন্নেছা বলেন, ‘এ ঘটনা কখনো মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের সন্তানরা ঘরেও যদি নিরাপদ না থাকে তাহলে আমরা কোথায় বসবাস করছি?’

হরিনারায়ণপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল আলিম বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেককেই যার যার জায়গায় দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোথাও কোনো ঘটনা দেখলে দাঁড়াতে হবে এবং সমাধান করতে হবে। ’

পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এ ঘটনার অপরাধীকে আটক করতে সমর্থ হয়েছি। এ ঘটনার বিচার দ্রুত করা হবে। ’ এ সময় তিনি চৌমুহনী ও মাইজদীতে ১৬০টি জায়গায় ২০০ সিসিটিভি বসানোর ঘোষণা দেন।

গত বৃহস্পতিবার জেলা শহর মাইজদীতে তাসমিয়া হোসেন অদিতাকে ধর্ষণের পর গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় প্রধান আসামি অদিতার সাবেক গৃহশিক্ষক আবদুর রহিম রনি ছাড়াও ইসরাফিল (১৪), তার ভাই সাঈদকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।