আ.লীগের ঘাঁটিতে বিএনপির সমাবেশ

জাতীয়

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আজ ফরিদপুর বিভাগীয় গণসমাবেশ করবে বিএনপি। আওয়ামী লীগের অধ্যুষিত এলাকায় সরকারের বাধা চ্যালেঞ্জ করে বিভাগীয় সমাবেশে বড় জমায়েতের টার্গেট নিয়ে মাঠে প্রস্তুত বিএনপি। সবকিছু মিলিয়ে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি ফরিদপুরে বিএনপি ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে।

শনিবার বেলা ১১টায় কোমরপুরের আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে সমাবেশ শুরু হবে। সমাবেশ চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

এদিকে শহরের উপকন্ঠে কোমরপুরের আব্দুল আজিজ ইন্সটিটিউট মাঠে একদিন আগেই সমবেত নেতাকর্মীদের ভিড় উপচে পড়েছে। প্রধান অতিথি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা শুক্রবার রাতে গণসমাবেশস্থলে পৌঁছেছেন।

গণসমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর।

এদিকে ৩৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটসহ বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে সমাবেশ শুরুর একদিন আগেই আশপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে এসে জড়ো হয়েছেন। সেখানেই তারা উৎসবমুখর পরিবেশে খাওয়া-দাওয়া ও খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করেন।

মূলত; ফরিদপুর বিভাগীয় সমাবেশের ২ থেকে ৩ দিন আগেই পাঁচটি জেলার হাজারো নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে তারা এই পথ অবলম্বন করেন। অনেকেই বাড়ি থেকে চিড়া মুড়ি কলা নিয়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। মাঠের মধ্যে তাঁবু টাঙিয়ে চলে আড্ডা ও স্লোগান। মধ্যরাতে ওই তাঁবুর নিচেই ঘুমিয়ে রাতযাপন করেন হাজারো নেতাকর্মী। অনেকে চাদর, কাঁথা ও বিছানা নিয়ে রাত কাটান। এছাড়া স্থানীয় লোকজনের বাড়ির উঠান-বারান্দাতেও রাত কাটান সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা।

বিএনপির অভিযোগ, গণসমাবেশের আগে তাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত জেলায় ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাস ও মিনিবাস ধর্মঘট উপক্ষো করে বিভিন্ন উপায়ে সেখানে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে পৌঁছেছেন। এতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সমাবেশস্থল। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সেখানে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অবস্থান নেন। সারারাত তাদের অনেকে খোলা আকাশের নিচেই অবস্থান করেন।

শুক্রবার পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ, মাদারিপুর, শরিয়তপুর ও রাজবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন। দুপুরের পর থেকেই বাড়তে থাকে আগতদের ভিড়। সন্ধা নাগাদ পূর্ণ হয়ে উঠে মাঠ। পরে শুক্রবার দুপুরে সমবেত নেতাকর্মীরা কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইন্সটিটিউটশন জামে মসজিদে পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করেন।

বিএনপির নেতারা বলছেন, তাদের এই গণসমাবেশে নির্ধারিত সমাবেশস্থল ছাড়িয়ে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি শহরের রাজবাড়ি রাস্তার মোড় ছাড়িয়ে দুই কিলোমিটার দূর পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।

এদিকে শুক্রবার গণসমাবেশের মূল মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। এর বাইরে গণসমাবেশের মাইক লাগানো হচ্ছে প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে। সমাবেশের মাঠ ছাড়িয়ে ঢাকা-ফরিদপুর মহাসড়ক হয়ে শহর পর্যন্ত জনসমাগম ঘটবে বলে জানানো হয় বিএনপির পক্ষ থেকে।

বিএনপিকে ফরিদপুর বিভাগীয় সমাবেশটি করার জন্য শহরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। অবশেষে শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়।

প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগের অন্তর্ভুক্ত গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর এই ৫টি জেলা হচ্ছে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। ভোটের হিসেবেও এ অঞ্চলে আওয়ামী লীগের পাল্লা সবচেয়ে ভারি। তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের এই ঘাঁটিতে ভোটব্যাংক বাড়াতে এবার পরিকল্পিতভাবে বৃহত্তর সমাবেশ করে শোডাউনের প্রস্তুতি নেয় বিএনপি।

তবে এ সমাবেশে যেন লোকসমাগম কম হয় সে জন্য আওয়ামী লীগের নির্দেশে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ৩৮ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘট ডাকাসহ বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। অবশ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয় মহাসড়কে থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে ফরিদপুরে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়।

ফরিদপুর বিআরটিসি বাস পরিবহনের সহকারী পরিচালক মামুন হাসান ঢাকা টাইমসকে বলেন, শুক্র ও শনিবার ফরিদপুর থেকে সকল পথে বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি আমরা।

ফরিদপুর মহানগরের আহ্বায়ক এ এফ এম কাইয়ুম বলেন, সমাবেশে যেন সফল না হয় সেজন্য সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু কোনো প্রতিবন্ধকতাই সমাবেশকে ঠেকাতে পারবে না। এত প্রতিবন্ধকতার পরেও সমাবেশে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে জনগণ এই সরকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তারা এ সরকারের পতন চায়।

ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ঈসা ঢাকা টাইমসকে জানান, তাদের গণসমাবেশের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশ নগরকান্দা ও বোয়ালমারীসহ বিভিন্নস্থান থেকে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আওয়ামী লীগ গণসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতে পাল্টা জমায়েত করে জনমনে ভীতি সঞ্চারের চেষ্টা চালিয়েছে। যুবলীগ ও ছাত্রলীগ শহরে মিছিল বের করেছে। এর বাইরে গণসমাবেশের শুরু থেকেই সমাবেশের জন্য আবেদন করা নির্ধারিত স্থানের বদলে তাদের শহরের বাইরে গণসমাবেশ ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এত বাধার পরও নেতাকর্মীরা বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মতো ছুটে আসছেন।

বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন জায়গায় নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সমাবেশকে প্রতিবন্ধকতার চেষ্টা করছে সরকার। আমাদের বিগত পাঁচটি বিভাগীয় সমাবেশ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এতে অত্যন্ত নার্ভাস ফিল করছে সরকার।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ফরিদপুর বিভাগীয় গণসমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. এ জেড এম ডা. জাহিদ হোসেন সমাবেশে আসতে নেতাকর্মীদের বাধা দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে বলেন, সকল বাধা অতিক্রম করে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ইতোমধ্যেই ফরিদপুরে এসে পৌঁছেছে।

জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপক্ষে সরকারের দাবিতে বিভাগীয় (দলের সাংগঠনিক বিভাগ) পর্যায়ে সমাবেশ করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশ সম্পন্ন করেছে দলটি।

এরই অংশ হিসেবে ১৯ নভেম্বর সিলেটে, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় এবং ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে গণসমাবেশ করবে দলটি। সবশেষ ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।