আত্মহত্যাকারীর জন্য দোয়া করা যাবে?

আত্মহত্যাকারীর জন্য দোয়া করা যাবে?

ধর্ম শিক্ষা

ইসলামে আত্মহত্যা মারাত্মক অপরাধ, বড় গোনাহ। কোরআনে আল্লাহ আত্মহত্যা করতে নিষেধ করে বলেছেন,
لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ بِکُمۡ رَحِیۡمًا

তোমরা নিজদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু। (সুরা নিসা: ২৯)
আত্মহত্যায় আল্লাহর ওপর ভরসাহীনতা এবং আল্লাহর রহমত থেকে নৈরাশ্য প্রকাশ পায় যা কাফের বা অবিশ্বাসীদের বৈশিষ্ট্য। কোরআনে আল্লাহ বারবার তার রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন।

বিভিন্ন হাদিসে আত্মহত্যার কঠোর শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যাক্তি কোন ধারাল অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে অস্ত্র তার হাতে থাকবে, জাহান্নামের মধ্যে সে অস্ত্র দিয়ে সে তার পেটে আঘাত করতে থাকবে, এভাবে সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর যে ব্যাক্তি বিষপানে আত্নহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনের মধ্যে অবস্থান করে ওই বিষ পান করতে থাকবে, এভাবে সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর যে ব্যাক্তি নিজেকে পাহাড় থেকে নিক্ষেপ করে আত্নহত্যা করবে, সে ব্যাক্তি সব সময় পাহাড় থেকে নিচে গড়িয়ে জাহান্নামের আগুনে পতিত হতে থাকবে, এভাবে সে ব্যাক্তি সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। (সহিহ মুসলিম: ১০৯)তবে হাদিসের ব্যাখ্যাকাররা বলেন, এ হাদিসে জাহান্নামে চিরকাল অবস্থানের অর্থ দীর্ঘকাল বা লম্বা সময়, অনন্তকাল নয়। অধিকাংশ ফকিহ এ ব্যাপারে একমত যে

 

আত্মহত্যাকারী বড় গুনাহগার হলেও কাফের নয়। তাই সে চিরজাহান্নামী নয় এবং তার জন্য দোয়া করাও নিষিদ্ধ নয়। হাদিসে আত্মহত্যাকারীর জন্য নবিজির (সা.) দোয়া করার কথা বর্ণিত রয়েছে। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখন তোফায়েল ইবনে আমরের (রা.) সঙ্গে অন্য আরেকজন লোকও হিজরত করে। মদিনার আবহাওয়া অনুকূলে না হওয়ায় অসহ্য হয়ে লোকটি নিজের হাতের আঙ্গুলের গিরা কেটে ফেলে। এ কারণে অধিক রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। পরে তোফায়েল ইবনে আমর (রা.) একদিন স্বপ্নে লোকটিকে ভাল অবস্থায় দেখেন। কিন্তু তার হাত আবৃত ছিলো। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার হাত আবৃত কেন? জবাবে সে বলে, মদিনায় হিজরত করার কারণে মহান আল্লাহ হাত দুটি ছাড়া আর সবকিছুই ক্ষমা করে দিয়েছেন। তোফায়েল স্বপ্নের ঘটনা নবিজির (সা.) কাছে বললে তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। ফলে তার হাতও ভাল হয়ে যায় (সহিহ মুসলিম: ১১৬)

এ হাদিস থেকে বোঝা যায় আত্মহত্যাকারী কাফের নয়, তার জন্য দোয়া করা যায়, তার নামে দান-সদকা করা যায়, আমল করে সওয়াব পাঠানো যায়, আল্লাহ চাইলে তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন।