নারীর মর্যাদায় ইসলাম

নারীর মর্যাদায় ইসলাম

ধর্ম

নারীর মর্যাদা পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠা করেছে ইসলাম। অথচ ইসলামের বিরুদ্ধে বড় বড় স্লোগান দেয়া হয় যে, ইসলাম নারীকে সঠিক মর্যাদা দেয়নি বরং ঠকিয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধে এ অপবাদের জবাব তাদের মাঝেই রয়েছে যারা এ অপবাদ দেয়।

ইসলাম নারীকে যে মর্যাদা দিয়েছে তা অনুধাব করতে হলে অতিতের ইউনানী সমাজে, রুমান সমাজে, ইয়াহুদি সমাজে, খ্রিস্টান সমাজে, বৌদ্ধ সমাজ, আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে তথা হিন্দু সমাজে নারী অবস্থানের দিকে তাকাতে হবে। নারীদের অধিকারের বিষয়ে ইসলাম ছাড়া অন্যান্যদের অবস্থান ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের অবকাশ রাখে না।ইসলাম ছাড়া সংক্ষেপে অন্যান্য সমাজে নারীদের অবস্থান ছিল এক কথায়, পণ্য-দ্রব্যের মতো। যা বাজারে বিকিকিনি হতো। তাদের কোনো স্বাধীনতা বা ন্যুনতম মর্যাদা ছিল না। এমনকি পিতার সম্পত্তিতে নারীর কোনো অধিকার ছিল না। এমনকি তালাকের অধিকারও ছিল না।এমনকি ইসলামের পূর্ববর্তী যুগ তথা আইয়ামে জাহিলিয়্যাতের যুগে নারীদেরকে সামাজিক প্রয়োজনে উপহার হিসাবে অন্যের হাতে তুলে দেয়া হতো। কন্যা সন্তানদের জীবন্ত কবর দেয়া হতো। সম্পত্তিতে নারীর কোনো উত্তরাধিকার ছিল না। নারীদেরকেই উত্তরাধিকার সম্পত্তি হিসাবে ভাগ-ভাটোয়ারা করে নেয়া হতো। এক কথায় নারীদের বাঁচা-মরা পুরুষদের হাতে নিয়ন্ত্রণ হতো।

নারীর মর্যাদায় ইসলইসলাম নারীকে দিয়েছে বাঁচার অধিকার। ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়কে সমান মর্যাদার মানুষ ঘোষণা দিয়েছেন। যখন মানুষ নারী আত্মাকে মানবাত্মা হিসেবে বিশ্বাসই করতো না। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবজাতি! ভয় কর তোমাদের প্রতিপালককে, যিনি তোমাদেরকে একটিমাত্র আত্মা থেকে সৃষ্ঠি করেছেন। (সুরা নিসা : আয়াত ১)

অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবজাতি! নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্ঠি করেছি এবং বিভক্ত করেছি তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে যাতে তোমরা পরস্পর পরস্পরকে পরিচয় করতে পার।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১৩)
বিশ্বনবী বলেছেন, ‘নারীদেরও রয়েছে পুরুষের উপর অধিকার।’ এ ব্যাপারে কুরআনে এসেছে, ‘নারীদেরও রয়েছে অধিকার পুরুষের উপর যেমন পুরুষের রয়েছে নারীদের উপর।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ২২৮)

মায়ের পদতলে জান্নাত
সমগ্র বিশ্ব যখন নারীদের অভিশাপ হিসেবে চিহ্নিত করতো, নারীদেরকে জাহান্নামের গেট ও শয়তানের হাতিয়ার মনে করতো। তখন বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দিলেন, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত।’ তিনি আরো ঘোষণা করলেন, ‘মাতাপিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি। মাতাপিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।
কন্যাসন্তান কুলক্ষণে নয়
কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করাকে কুলক্ষণে, দুঃসংবাদ, লজ্জা এবং দারিদ্র্যতার কারণ মনে করা হতো। ঐ সমস্ত লোকদেরকে ধিক্কার জানিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন সুসংবাদ দেয়া হয় তাদের কাউকে কন্যাসন্তানের, তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় আর সে হয় বড়ই ব্যথিত। সে মুখ লুকায় লোকদের থেকে, তাকে যে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে তার গ্লানির কারণে। সে কি একে (জীবিত) রাখবে বেইজ্জতী সত্ত্বেও, না তাকে পুতে রাখবে (জীবিত কবর দিবে) মাটিতে। তাদের ফায়সালা কতইনা নিকৃষ্ট।’ (সুরা নহল : আয়াত ৫৮-৫৯)

এক সাহাবা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! খেদমত করবো কার? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার মায়ের। এভাবে লোকটি তিনবার জিজ্ঞাসা করলেন। তিনিও মায়ের খেদমত করার কথা বললেন। লোকটি যখন চতুর্থবার খেদমতের কথা জিজ্ঞাসা করলেন, তখন বিশ্বনবী বললেন, তোমার বাবার।

ইসলামের বিরুদ্ধে একটি বড় অপবাদ দেয়া হয় যে, ইসলাম নারীর মর্যাদা দেয়নি৷ অমুসলিমদের সাথে সাথে আজকাল কিছু অতি মডার্ন মুসলমানরাও এই শ্লোগান দেন। মুসলিম উম্মাহর উচিত নারীর অধিকার রক্ষার্থে ইসলামের দিক-নির্দেশনাগুলো বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে প্রত্যেক বনি আদমের মানসপটে তুলে ধরা। নারীর যথাযোগ্য মর্যাদা রক্ষা করা। কর্মের প্রতিটি ক্ষেত্রের আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় সহাবস্থান তৈরি করা। সর্বোপরি নারীদের মহামূল্যবান সম্পদ ইজ্জত-আব্রু এবং অধিকার প্রতিষ্ঠায় কুরআন ও সুন্নাহর বিধান বাস্তবায়ন করতে সরকার, সমাজ ও স্বেছাসেবী প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসা ঈমানি দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুহাম্মাদিকে ইসলামে নারীর মর্যাদা রক্ষার বিষয়গুলো সমগ্র দুনিয়ার মানুষের সামনে তুলে ধরার তাওফিক দান করুন। আমিন।