শিশুর স্থূলতা কমাতে করণীয়

শিশুর স্থূলতা কমাতে করণীয়

নারী ও শিশু স্বাস্থ

স্থূলতা নিয়ে আমরা বড়রা বেশ চিন্তিত এবং সবাই কমবেশি চেষ্টা করি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে। কিন্তু শিশুর ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে আমরা একেবারেই চিন্তা করি না; বরং আমাদের সমাজে নাদুসনুদুস না হলে শিশুদের অসুস্থ বা রোগা বলে ধরা হয়। একটু মোটাসোটা শিশুই আমাদের পছন্দ। কিন্তু শিশুর এই বাড়তি ওজন তাকে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে।শিশুর এই স্থূলতার জন্য দায়ী অবশ্যই শিশু নিজে নয়, এর জন্য দায়ী আমরাই।

 

 

এটা সত্যি যে শিশু কখন কী খাবে, কতটুকু খাবে, এগুলো নিয়ে আমরা বেশ যত্নবান। কিন্তু মাঝেমধ্যে এই যত্ন বা খাবার অতিরিক্ত হয়ে যায়। অনেক সময় জোর করে হলেও খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর খাবার বাছাই করতেও আছে অজ্ঞতা।শিশুকালে যাদের ওজন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি, তাদের কিশোর বয়স থেকেই বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। যেমন টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যালার্জি, কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তে বেশি চর্বি, অ্যাজমা, কিছু ক্যানসার ইত্যাদি। এ ছাড়া স্থূল বাচ্চারা তাদের বয়সী অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে ও বিভিন্ন কার্যকলাপে অংশ নিতে পারে না। অনেক সময় বুলিংয়ের শিকার হয় ও একধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।গোড়ায় গলদটা শিশুর জন্মানোর পরপরই। বুকের দুধের পরিবর্তে অনেকের ফর্মুলা মিল্ক পছন্দ। স্থূলতার শুরু ওখানেই। একটু বড় হলে এর সঙ্গে যুক্ত হয় উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয়, চকলেট, আইসক্রিম, জুস ইত্যাদি। স্কুল ও বাসার সামনে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ না থাকায় শিশুরা ঘরের ভেতরে টিভি দেখা ও ভিডিও গেমসের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে। এতে কমে যায় শারীরিক সক্রিয়তা।

 

শিশুরা বেশি চিনি দিয়ে তৈরি খাবার খেতে ভালোবাসে। এতে খাবারে ক্যালরির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। স্কুলের টিফিনে বাড়ির খাবারের চেয়ে বাইরের কেনা খাবারের প্রতি আমরাই শিশুকে আগ্রহী করে তুলি। শিশু ভালো কিছু করলে পুরস্কার হিসেবে চকলেট, চিপস, ললিপপ ইত্যাদি দেওয়া হয়। শিশু খেতে চায় না, এই অজুহাতে ফল, শাকসবজি দিতে চেষ্টাও করি না। এতে কোষ্ঠকাঠিন্যসহ বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবজনিত রোগের উপসর্গ দেখা দেয়।শিশু স্থূল হলে হাইপোথাইরয়েডিজম, গ্রোথ হরমোনের অভাব, কুশিং সিনড্রোম ইত্যাদি আছে কি না, সেগুলো চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে।

 

যা করতে হবে
শিশুর বয়স ছয় মাস পূর্ণ হলে বাড়ির সব খাবারে অভ্যস্ত করাতে হবে। আস্তে আস্তে শিশুকে প্রতিটি খাবারের স্বাদের সঙ্গে পরিচিত করতে হবে। শিশুকে বাইরের তৈরি খাবার না খাওয়ানোই ভালো। এক বেলার খাবারে চার-পাঁচ রকমের ডাল, অনেক রকমের বাদাম, খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি একসঙ্গে মেশাবেন না। ভয় দেখিয়ে, টিভি বা মুঠোফোন দেখিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না।
শিশুকে জোর করে কিছু খাওয়াবেন না। প্রতিদিনের খাবারে শাকসবজি, ফল, সঙ্গে ডিম, মাছ, মুরগি, ভাত বা রুটি, সবকিছুর ভারসাম্য ঠিক রাখতে হবে। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, তেলে ভাজা খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। প্রয়োজনে শিশুবিশেষজ্ঞ বা পুষ্টিবিদের সহায়তা নিতে পারেন।

 

ফারজানা ওয়াহাব, পুষ্টিবিদ, আলোক হাসপাতাল লিমিটেড