নানিয়ারচরের সুমিষ্ট কমলা

নানিয়ারচরের সুমিষ্ট কমলা

অর্থনীতি চট্টগ্রাম জাতীয় দেশ জুড়ে বাংলাদেশ

গাছে গাছে হলুদ রঙের কমলা ঝুলছে। ছোট ছোট ঝিরি ঘেঁষে গড়ে উঠেছে কমলাবাগান। সম্প্রতি রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার যাদুখাছড়া ও নব কার্বারিপাড়ায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেল।আকারে বড়, রসাল আর মিষ্টি স্বাদের কমলার ফলন হচ্ছে পাহাড়ের বেশ কিছু স্থানে। কৃষিবিদেরা বলছেন, কমলার জন্য বিশেষ উপযোগী আবহাওয়া ও মাটির মান খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর ওপর নির্ভর করে ফলের মিষ্টত্ব, আকার ও ফলন। পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশ কিছু স্থানে কমলা চাষ হয়।তবে সব এলাকার কমলা মিষ্টি ও আকারে বড় হয় না। তাঁদের মতে, রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার সাবেক্ষ্যং ও বুড়িঘাট ইউনিয়নের শৈলেশ্বরী, গবছড়ি, যাদুখাছড়া ও নব কার্বারিপাড়ায় ভালো কমলার ফলন হচ্ছে।

 

উপজেলাটির ১৫টি গ্রামে ৩৫০ পরিবার কমলা চাষ করছে। অথচ বছর চারেক আগেও কমলাচাষির সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫০। এ ছাড়া প্রতিটি পরিবার বাড়ির আঙিনায় কমলার চারা রোপণ করছে।নানিয়ারচরের যাদুখাছড়া ও নব কার্বারিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, কমলাবাগানের পূর্ব দিকে গভীর বন। বনের কারণে আবহাওয়াও বেশ ঠান্ডা। এমন আবহাওয়াই কমলা চাষের উপযোগী।যাদুখাছড়ার কমলাচাষি সবিনয় চাকমা বললেন, তাঁর বাগানে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ভালো ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে পুরো কমলাবাগানটি তিনি ৪ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। সবিনয় বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এক লাখ, দেড় লাখ ও দুই লাখ করে বেশ কিছু চাষি আগাম বাগান বিক্রি করে দিয়েছেন।

 

 

 

ব্যবসায়ীরা কাঁচা অবস্থায় (আগাম) কমলা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।’কৃষি কার্যালয় ও চাষিরা জানান, নানিয়ারচরে কমলা চাষ করে বেশ কিছু কৃষক পয়সার মুখ দেখেছেন। অনেকেই জাম্বুরা, কলা, আম ও কাঁঠাল চাষ ছেড়ে কমলা চাষে বিনিয়োগ করছেন। তাঁদের ভাষ্য, কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করেই তাঁরা কমলা চাষ করছেন। সে জন্য নানিয়ারচরের কমলার কদরও বেশি। আকারে বড় হওয়ায় দামও পাচ্ছেন বেশ। নভেম্বর মাসের শুরুতে কমলা পাকা শুরু হয়। ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত গাছে কমলা থাকে।নানিয়ারচরের কমলা এর আগে জোড়া হিসেবে বিক্রি হতো। তিন বছর ধরে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজিতে বড় আকারের কমলা ৪ থেকে ৫টি, মাঝারি আকারের ৫ থেকে ৬টি ও ছোট আকারের কমলা ৬ থেকে ৮টি ওঠে। বাজারে বড় আকারের কমলার কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, মাঝারি ২৫০ থেকে ৩০০ ও ছোট আকারের কমলা ২০০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। তবে এখন মৌসুমের শেষ সময়ে দাম বেশ চড়া। গত সপ্তাহে বড় আকারের কমলা প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।কৃষিবিদেরা জানিয়েছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে একসময় বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকসহ বেশ কিছু এলাকায় কমলা চাষ হতো। প্রাকৃতিক বন উজাড় ও উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় ওই সব এলাকায় এখন আর কমলার ফলন হয় না।কৃষিবিজ্ঞানীরা জানান, নানিয়ারচরের যেসব এলাকায় কমলার ফলন ভালো হয়, সেই সব এলাকা থেকে বীজ এনে অন্যত্র পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়েছে। কিন্তু সেই অর্থে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

 

 

কিছু স্থানে ফলন হলেও কমলা টক, আকারে ছোট হচ্ছে। আবার আধা পাকা অবস্থায় ঝরে যায়। এ ছাড়া গাছের গঠনও ভালো নয়।রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৬৭৫ একর জমিতে কমলার চাষ হয়েছে। এসব কমলাবাগানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে শুধু নানিয়ারচর উপজেলার সাবেক্ষ্যং ও বুড়িঘাট ইউনিয়নে ৩৬৪ একর জমিতে কমলার চাষ হয়েছে। বান্দরবানে ২ হাজার ২৫০ একর ও খাগড়াছড়িতে ৩৬৫ একর জমিতে কমলার চাষ হয়েছে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক তপন কুমার পাল মনে করেন, নানিয়ারচরের মাটিতে বিশেষ কিছু গুণ রয়েছে, যা কমলা চাষের জন্য বিশেষ প্রয়োজন। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, মাটিরাঙ্গা, মহালছড়ি, গুইমারা এবং বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচিতে কমলা হচ্ছে। কিন্তু ফলন আশানুরূপ নয়। তবে এসব এলাকায় কমলার ফলন বাড়ানো ও গুণগত মান উন্নত করার চেষ্টা তাঁরা করে যাচ্ছেন।