বিআরটিএতে দালালের দৌরাত্ম্য, দায় চাপিয়েই পার কর্মকর্তারা

বিআরটিএতে দালালের দৌরাত্ম্য, দায় চাপিয়েই পার কর্মকর্তারা

জাতীয় দেশ জুড়ে বাংলাদেশ

ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে দীর্ঘসূত্রতা কাটছেই না। বারবার সময় দিয়েও কথা রাখতে পারছে না বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। মাসের পর মাস ঘুরে ভোগান্তি সহ্য করেও সেবাগ্রহীতারা পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত সেবা। আর দালালের দৌরাত্ম্য তো আছেই। সিরিয়াল এগিয়ে দিতেও টাকা চায় দালাল। সার্বিক বিষয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা নিজেরা জানেন না জানিয়ে অন্য কর্মকর্তাকে দেখিয়ে দিয়েই দায় সারেন।সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত বিআরটিএ কার্যালয়ে সরেজমিনে এ চিত্র পাওয়া যায়।

 

সেবাগ্রহীতারা বলছেন, অফিসে ঢুকলেই দালাল এসে দ্রুত ড্রাইভিং লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন অঙ্কের টাকায় কাজ করে দিতে চায়। এছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ডেলিভারি কাউন্টারে সিরিয়াল ভঙ্গ করে দ্রুত লাইসেন্স দিতে ৩০০ টাকা করে দালালদের অফার দিতে দেখা গেছে।মিরপুরের এ কার্যালয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্টকার্ড নিতে এসেছেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি। তিনি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে গত বছরের মে মাস থেকে অফিসিয়াল প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। কিন্তু লাইসেন্স এখনো পাননি। ভোগান্তি পোহানো এই ব্যক্তি বলেন, ‘আমার লাইসেন্স ডেলিভারি ডেট ছিল গত ১৩ নভেম্বর। আমি ওইদিন এলে বলা হয় কার্ড রেডি হয়নি।

 

 

পরে আরেক দিন এসেও পাইনি। আজ আবার এলাম। লাইনে দাঁড়িয়েছি। কাউন্টারে গেলে বুঝতে পারবো লাইসেন্স পাবো কি না। কেন বারবার ঘোরাচ্ছে সেটা জানি না।’সেখানে কথা হয় জাবেদ হোসেন নামে আরেক ব্যক্তির সঙ্গে। এই ব্যক্তিকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্টকার্ড দেওয়ার কথা ছিল গত ৬ জুলাই। সেদিন এসে লাইসেন্স না পেয়ে ফিরে যান তিনি। পরে ৮ নভেম্বর পুনরায় আসতে বলে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। সেদিনও হতাশ হন জাবেদ। সোমবার আবার আসেন কার্ড নিতে। তিনি বলেন, ‘লাইসেন্স পেতে অনেক দিন ধরে ঘুরছি। বারবার শুধু তারিখ পরিবর্তন করে। কেন করে জানি না। বারবার অন্য কাজ ফেলে রেখে এখানে এসে বসে থাকতে হয়।’কার্যালয়ের ড্রাইভিং লাইসেন্স ডেলিভারি কক্ষের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।

 

 

এদের সবাই লাইসেন্স কার্ড সংগ্রহ করতে এসেছেন। এসব সেবাগ্রহীতার কাছে দালালরা এসে ৩০০ টাকার বিনিময়ে দ্রুত কার্ড সংগ্রহ করে দেওয়ার অফার দিতে দেখা যায়। এই প্রতিবেদক সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে ‘দ্রুত লাইসেন্স করবেন কি না!’ কয়েকজন দালাল জিজ্ঞাস করেন। পরে প্রতিবেদকের পরিচয় অনুমান করতে পেরে দালালরা দৌড়ে পালিয়ে যান।সেবা নিতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, ‘এক কথায় ওরা দালাল। ৩০০ টাকা দিলে দ্রুত কাজ করে দেবে। আমার কাছে চেয়েছে আমি টাকা দেইনি। দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও টাকা দেবো না।’এসব অনিয়ম ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয়ের ড্রাইভিং লাইসেন্স শাখার সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী মোবারক হোসেন কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমাদের হেড অফিসের নির্দিষ্ট উইং আছে সেখানে আপনি কথা বলেন।

 

 

 

এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে আমি কথা বলতে চাচ্ছি না।’ড্রাইভিং লাইসেন্সের ধীরগতির বিষয়ে বিআরটিএর রোড সেফটি উইংয়ের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আপনি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। এ বিষয়ে আমি সঠিক জানি না।’তবে দালালের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘অফিসের ভেতরে কোনো দালাল নেই। বাইরে দালাল থাকলে আমাদের কিছু করার নেই। ওখানে আমাদের একজন ম্যাজিস্ট্রেট থাকেন। কোনো সমস্যা থাকলে তাকে জানাতে পারেন।’

 

এসব বিষয়ে জানতে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারকে একাধিকবার কল ও মেসেজ দিলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।এর আগে গত ৮ আগস্ট বিআরটিএর মিরপুর কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে সেবাগ্রহীতাদের অর্থ নেওয়া, হয়রানি ও হেনস্তা করার অভিযোগে ছয় দালালকে একমাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মিরপুর সার্কেল অফিসের ভেতরে ব্যাংকের সামনেসহ বিভিন্ন স্থান থেকে দালালদের আটক করা হয়। এছাড়া বেশ কয়েকবার দুদক ও র্যাব অভিযান চালিয়েছে বিআরটিএ কার্যালয়ে।