গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি বাড়ায় বাড়তি ওজন

গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি বাড়ায় বাড়তি ওজন

নারী ও শিশু স্বাস্থ

গর্ভধারণ থেকে সন্তানপ্রসব পর্যন্ত একজন মায়ের শরীরে নানা পরিবর্তন ও ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এ সময় একজন নারীর দরকার হয় সঠিক পুষ্টি ও যত্নের।আজকের বিজ্ঞাননির্ভর সময়ে আমাদের দেশের মায়েরা অনেকটাই মান্ধাতা আমলের চিন্তাভাবনা পোষণ করে থাকেন। যেমন সন্তানধারণ করলে শুরু থেকেই দ্বিগুণ খাবার খেতে হবে, প্রচুর ভাত খেতে হবে, এসব ঠিক নয়। আবার এটাও ভাববেন না যে এ সময় মায়ের বাড়তি যত্নের দরকার নেই।

অবশ্যই বাড়তি যত্ন দরকার, তবে সেটা কখনোই মাত্রাতিরিক্ত নয়।একজন মায়ের সম্পূর্ণ গর্ভকালে ৯ থেকে ১২ কেজি ওজন বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। এর বেশি হলে তা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, মায়েরা ২০ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত ওজন বাড়িয়ে ফেলেন; যা প্রসবের সময় বাচ্চা ও মা উভয়ের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। আর সন্তানধারণের আগে থেকেই যদি আপনি একটু বেশি ওজনের হয়ে থাকেন, তবে তো ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যাবে।মায়ের ওজন অনেক বৃদ্ধির পরও কখনো কখনো দেখা যায়, আলট্রাসনোগ্রাফিতে গর্ভের সন্তানের ওজন অনেক কম। এর মানে, অতিরিক্ত খাবার খেয়ে শুধু আপনার ওজনই বেড়েছে, বাচ্চার ওজন ঠিকভাবে বাড়েনি। অতিরিক্ত ওজনের কারণে পায়ে পানি আসা, হাঁসফাঁস অবস্থা, কোমর ব্যথা, ঘুমের সমস্যা বাড়ে। দেখা দিতে পারে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন জটিলতা। মায়ের এসব জটিলতার জন্য সময়ের আগে প্রসব, স্বল্প ওজনের শিশু প্রসব হতে পারে।

মায়ের ওজন যেন অতিরিক্ত না বাড়ে আর বাচ্চার ওজন যেন ঠিকমতো বাড়ে, সেটা নিশ্চিত করতে।

গর্ভের প্রথম তিন মাস খাবারের পরিমাণ বেশি বাড়াবেন না। কারণ, এ সময় বাচ্চার কোনো শারীরিক গঠন হয় না। এ সময় শুধু জেনেটিক বিভাজন ঘটে।

দ্বিতীয় তিন মাসে আগের চেয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ ক্যালরি পরিমাণ খাবার বাড়াতে হবে। তবে এমন খাবার যোগ করা ভালো, যাতে ক্যালরি কম কিন্তু ভিটামিন-মিনারেলে ভরপুর থাকে। এ ক্ষেত্রে দুধ, টকদই, বিভিন্ন রকমের বাদাম বা দুধের তৈরি খাবার খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে। প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণ করে এমন খাবার বেশি খাওয়া উচিত।

এই সময় বাচ্চার শারীরিক গঠন শুরু হয়। শর্করা ও ফ্যাটের তুলনায় প্রোটিনের পরিমাণ বাড়াতে হবে। মৌসুমি ফল ও রঙিন শাকসবজির পরিমাণ বাড়াতে হবে। সব ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলের জোগান নিশ্চিত করতে হবে। শরীরের বিভিন্ন অংশের জন্য আলাদা আলাদা ভিটামিন ও মিনারেলের দরকার।

সপ্তম মাস থেকে প্রসবের আগপর্যন্ত আরও কিছু পরিমাণ খাবার বাড়াতে হবে। এই সময় গর্ভের বাচ্চার ওজন সবচেয়ে বেশি বাড়ে। তাই কিছু কার্বোহাইড্রেটের পাশাপাশি প্রোটিন জাতীয় খাবার কিছুটা বাড়াতে হবে। প্রোটিনের উৎস হিসেবে সামুদ্রিকসহ অন্যান্য মাছ, মাংস, ডাল, শিমের বিচি রাখতে হবে।

প্রয়োজন হলে এ সময় একজন বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে।