ফেসবুক পোস্ট নিয়ে পুলিশের কাছে যা বললেন নোবেল

আইন-আদালত গণমাধ্যম ঢাকা দেশ জুড়ে বাংলাদেশ বিনোদন

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ডিভিশনের তলবের প্রেক্ষিতে বুধবার (১৯ মে) বিকেলে ডিএমপি সদর দফতরে যান কণ্ঠশিল্পী মাঈনুল আহসান নোবেল। সেখানে ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি ও ক্রাইম ইউনিটের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সেখানে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া তার পোস্টগুলোর বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।

এসময় নোবেল পুলিশকে জানান, তার মানসিক চিকিৎসা চলছে। পুলিশের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ফেসবুকেও তার মানসিক চিকিৎসার কথা জানান।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, নোবেলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকায় তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। তবে তার সাম্প্রতিক পোস্টগুলোর পেছনের উদ্দেশ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। পুলিশের কাছে তিনি নিজেকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে দাবি করেছেন। এ ছাড়াও তার কয়েকটি বিতর্কিত পোস্টের বিষয়ে তিনি ফেসবুক হ্যাকড/অন্য কেউ পোস্ট দিয়েছে বলে দাবি করেছেন। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নোবেলের ফেসবুক হ্যাক হওয়ার কোনো প্রমাণ পায়নি।

 

সূত্র আরও জানায়, এ সময় নোবেলকে তার ফেসবুক পোস্টের ত্রুটিবিচ্যুতিগুলো সম্পর্কে জানানো হয়। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত আইনগুলোর বিষয়ে তাকে অবগত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা না থাকায় তাকে আটকে রাখা হয়নি। তবে নোবেলকে জানানো হয় কেউ যদি তার বিরুদ্ধে মামলা করে তাহলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‌‘নোবেলের সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে ডেকে তার পেজে অশোভনীয় পোস্ট নিয়ে সাইবার আইনের ভাষ্য, সাইবার ইথিক্স ও ইন্টারনেট ব্যবহারকীদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে অবগত করা হয়েছে। আশা করি তিনি নিজের অন্যায় বুঝতে পেরেছেন।’

 

তিনি বলেন, ‘তবে তার পোস্টে ক্ষুব্ধ এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আইনি পদক্ষেপ নেয়ার অধিকার রয়েছে। তারা চাইলে প্রচলিত আইনে অভিযোগ করতে পারেন। এমন অভিযোগ থাকলে পুলিশও আইন অনুযায়ী কাজ করবে।’

এদিকে, পুলিশের সঙ্গে কথা বলার পর নোবেল তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আমি মাঈনুল আহসান নোবেল! আমি আপনাদের নোবেল! আজ আমি নোবেল হতে পেরেছি আপনাদের ভালবাসা, সমর্থন ও দোয়ায়। দুই বাংলার অসংখ্য বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য গান গাইতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। আমি বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের বাংলা গানের ভক্তদের জন্য মৌলিক গান নিয়ে ফিরে আসতে চাই। আমি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে আমার পেজে সমসাময়িক রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্ট্যাটাস দেই বা কথা বলি।

 

মানসিক ও শারীরিক বিচ্যুতি অনেক সময় ফেসবুকসহ আমাদের মিথস্ক্রিয়ার বিভিন্ন জায়গায় প্রভাব ফেলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আমার অনেক পোস্ট এই বিচ্যুতির ফল। আমি বিশ্বাস করি আমার পোস্ট অনেককেই ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং সমষ্টিগতভাবে সম্মানিত নেটিজেনদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।’

 

নোবেল বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বিখ্যাত লিজেন্ড শ্রদ্ধেয় জেমস ভাই, শ্রদ্ধেয় ও প্রিয় তাপস ভাই, প্রিয় গীতিকার-সুরকার ইথুন বাবু ভাই, সুপ্রিয় সংগীত পরিচালক আহমেদ হুমায়ন ভাই, সময় টিভির সাংবাদিক আল কাছির ভাইসহ সকল সাংবাদিক ভাইবোনদের কাছে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে ক্ষমা চাই ও আমার পোস্টের মাধ্যম যারা কষ্ট পেয়েছেন তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করি। আমি এই মুহূর্তে আমার মানসিক ও শারীরিক বিচ্যুতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমার পরিবারের সমর্থনে আমি চিকিৎসা গ্রহণ করছি ও আল্লাহর রহমতে শিগগিরই সুস্থ হয়ে নতুন গান নিয়ে ফিরে আসবো।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি যেহেতু বাংলাদেশের সাইবার আইন ও পুলিশের সাইবার ইউনিটের কার্যক্রম বিষয়ে সচেতন, আমি সচেতনভাবে দেশের আইন বা নৈতিকতার বাইরে কিছু করতে চাই না বা আর করবো না, তারপরও আমার অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মের জন্য যেকোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়া হলে তা মাথা পেতে নেব। আমিও আশা করবো আপনারা সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ করে দেবেন। ভালো থাকুক নোবেল, ভালো থাকুক বাংলাদেশের সাইবার স্পেস, ভালো থাকুক বাংলাদেশের সংস্কৃতি। ভালো থাকুন আপনারা সবাই। আল্লাহ সহায়!’

 

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে নোবেল ফেসবুকে সিনিয়র শিল্পী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে আক্রমণ এবং তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে স্ট্যাটাস দেন। যা ব্যাপকভাবে সর্বমহলে সমালোচিত হয়।