সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে বিশ্বব্যাংকের ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ চায় সরকার

আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ

বাংলাদেশে মোট সড়কের দৈর্ঘ্য ২২ হাজার ৪২৮ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক ১০৮টির মোট দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৯৮৯ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। এছাড়া ১৪৮টি আঞ্চলিক মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৮৯৮ কিলোমিটার এবং ৭৩১টি জেলা সড়কের দৈর্ঘ্য ১৩ হাজার ৫৪২ কিলোমিটার। এসব সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্বাসনের ব্যয় নির্ধারণ করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। চারটি অর্থবছরে বিশাল অঙ্কের অর্থ দরকার সড়ক মেরামতে। চার অর্থবছরে দরকার ১০ হাজার ৩২১ কোটি টাকা।

এসব সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য বাজেটের ঘাটতি মেটাতে প্রাথমিকভাবে বিশ্বব্যাংকের কাছে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ চায় সরকার। সড়ক মেরামতে যে পরিমাণ ব্যয় প্রয়োজন এর ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ পূরণ হয়। ফলে প্রতি বছর সড়ক মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ গড়ে ৪০ শতাংশ বাজেট ঘাটতি থাকছে। এ ঘাটতি মেটাতেই বিশ্বব্যাংকের ঋণ চায় সরকার।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) মো. জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সারাদেশের সড়ক মেরামতে বড় অঙ্কের বাজেট দরকার। রাজস্বের আওতায় এ ব্যয় মেটানো হয়। তারপরও অনেকটা ঘাটতি থাকে। ফলে সড়ক সঠিকভাবে মেরামত সম্ভব হয় না। এজন্য বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় প্রকল্প নেওয়া হবে। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কথা হয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম, গাজীপুর-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-ভাঙ্গাসহ কিছু মহাসড়ক ফোর লেন থেকে সিক্স লেনে উন্নীত করা হয়েছে। এসব সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে পর্যাপ্ত বাজেট নেই। ফলে সড়কের বেহাল চিত্র প্রতিনিয়ত স্পষ্ট হচ্ছে। বাজেট ঘাটতির কারণে সড়কগুলো যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। গত অর্থবছরে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে মোট চাহিদার মাত্র ৬২ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। ফলে রুটিন ও বাৎসরিক সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কাজ সঠিকভাবে হয়নি, বাজেট ঘাটতি রয়ে গেছে। প্রতি বছরই বাজেটের অভাবে সড়ক মেরামতের কাজ পূর্ণাঙ্গভাবে হচ্ছে না।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ জানায়, দেশের মোট সড়ক মেরামতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ হাজার ৪৫৮ কোটি ৬৫ লাখ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ হাজার ৬১২ কোটি ৮৬ লাখ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২ হাজার ৩৭৯ কোটি ৭৫ লাখ এবং ২০২৫-২৫ অর্থবছরে ১ হাজার ৮৭০ কোটি ৫৬ লাখ টাকার প্রয়োজন। ফলে আগামী চারটি অর্থবছরে সড়ক মেরামতের জন্য মোট প্রায় ১০ হাজার ৩২১ কোটি টাকা প্রয়োজন।

সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে ‘রোড নেটওয়ার্ক মেইনটেন্স অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল ক্যাপাসিটি ডেভলপমেন্ট’ প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪৫৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর মধ্য থেকে ২ হাজার ৫৯ কোটি টাকা বিশ্বব্যাংকের কাছে ঋণ সহায়তা চায় সরকার। ২০২২ সালের জুলাই হতে ২০২৬ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

প্রকল্পের প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নীতিগতভাবে পিডিপিপি অনুমোদন দিলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর বৈদেশিক ঋণের জন্য বিশ্বব্যাংকে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রস্তাব পাঠাবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য: মহাসড়ক নেটওয়ার্কের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সড়ক দুই লেন হতে চার বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন সড়কসমূহের পিরিয়ডিক মেইনটেন্স এবং ব্যাকলগ মেইনটেন্সের জন্য বাজেট ঘাটতি নিরসনে অর্থায়ন করা এ প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য। এছাড়া সড়ক সেক্টরের পরিকল্পনা, নীতি প্রণয়ন এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালীকরণ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধিও এর উদ্দেশ্য।

প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম: ৯০০ কিলোমিটার সড়ক নির্বাচিত করে এগুলোর মানসম্মত রক্ষণাবেক্ষণ, সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ তদারকি এবং ক্রয়কার্যে সহায়তা দিতে পরামর্শক সেবা, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন কম্পোনেন্টের জন্য পরামর্শক সেবা, বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কার্য সম্পাদনের জন্য পরামর্শক সেবা নিয়োগ।

নানা কারণে এ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের এ প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে বলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ জানিয়েছে।

প্রকল্পটি গ্রহণের যৌক্তিকতা: সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাজেট ঘাটতি নিরসনে অর্থায়ন পাওয়া গেলে অন্তত ৯০০ কিলোমিটার সড়কের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হবে। ফলে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন সহজতর, নিরাপদ এবং গতিশীল হবে। উন্নততর সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কৌশলের প্রয়োগের মাধ্যমে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে আধুনিক সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ

চর্চা ও প্রযুক্তির বিকাশ ঘটবে। প্রকল্পের কারিগরি সহায়তা অংশের আওতায় রোড ট্রান্সপোর্ট সেক্টর ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড কোর-অর্ডিনেশন প্ল্যাটফর্ম গঠিত হবে। ফলে পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোর মধ্যে একীভবন ও আন্তঃসমন্বয়ের মাধ্যমে এ সেক্টরের নীতিমালা এবং কর্মসূচি বাস্তবায়নে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরসহ সড়ক সেক্টরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াবে। আর তা সড়ক খাতের আধুনিকায়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে ।

সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মানসম্মত সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে সড়ক ব্যবহারকারীদের জীবনমান উন্নয়ন, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনসহ উন্নততর সম্পদ ব্যবস্থা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া প্রকল্পটি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হলে তা সড়ক পরিবহন সেক্টরের আধুনিকায়ন এবং সক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হবে। সর্বোপরি এসব অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন হবে, যা জিডিপিতে রাখবে বড় অবদান।