যে গুণে জীবন সুখী হয়

ধর্ম

গ্রামের এক পরিবার। বেশ বড় পরিবার। বাবা ইন্তেকাল করেছেন। চার ভাই ও বিবি-বাচ্চা সহ প্রায় আঠারো জন একসঙ্গে থাকে। কিন্তু তাদের মধ্যে খুব মিলমিশ, কোনো ঝগড়াঝাঁটি নেই। তাদের একতা পুরো গ্রামে উদাহরণ হয়ে গেছে।

তাদের বড় ভাইয়ের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, ‘আপনাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদ নাই এটা খুব ভালো কথা, কিন্তু এর রহস্য কী?’

তিনি বললেন, ‘আমাদের মধ্যে একেবারেই ঝগড়া হয় না এমন না, এতগুলো লোক ঘরে একসঙ্গে থাকে, তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়ই। কিন্তু আমরা এই দ্বন্দ্বটা বাড়তে দেই না। কেউ রেগে গেলে দাঁড়িয়ে যায়, তারপর দশ কদম হাঁটে। এভাবেই রাগ পড়ে যায়।’

এক সাধারণ পড়াশোনা করা পরিবার, কিন্তু তারা সুখময় জীবনের রহস্য আবিষ্কার করে করে ফেলেছে। আর তা হলো— ‘ঝগড়া একটা সাময়িক বিষয়। যদি তাকে বাড়তে দেওয়া না হয়, তাহলে নিজে নিজেই শেষ হয়ে যাবে।’

এই মূলনীতি ওই পরিবার খুব শক্তভাবে ধরে নিয়েছে, এবং তার সুফলও পাচ্ছে। বাবার মৃত্যুর সময় তাদের পারিবারিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। কিন্তু পরস্পরের সহায়তা ও একতার কারণে বর্তমানে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভালো। চার ভাই পরিবারের একেক অংশের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে। বড় ভাই খেত-খামারের দায়িত্ব নিয়েছেন। মেজো ভাই দোকানদারি সামাল দেন। সেজো ভাই ঘরের সব দায়িত্ব পালন করেন। আর ছোট ভাই বাহিরের দায়িত্ব সামলান। কাজের বণ্টন তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্বকে আরও কমিয়ে দিয়েছে।

এরকমভাবে একবার এক লোকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় যিনি আলাদা আলাদা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন, কিন্তু প্রত্যেকের চোখে সম্মানিত ও আপন ছিলেন। প্রায় প্রত্যেকদিনই দুই দলের লোকের সঙ্গে বসতেন এবং কাজ-কারবারের আলাপ করতেন।

তো আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করি— ‘আপনাদের দুই দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে ওনার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেন?’ রাজনৈতিক দলের একজন মুচকি হেসে বললেন, ‘আমরা মতবিরোধকে বগলে চেপে রেখে কাজ করি।’

তার মুখে একথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। এত বড় এক সমস্যার তারা কত সহজ সমাধান আবিষ্কার করে নিয়েছে। বিছানায় যদি কাঁটা পাওয়া যায়, আমরা তখন কাঁটা সরিয়ে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিই। মতবিরোধের বেলাতেও কেন একই কাজ করি না।
দুইজন মানুষের মধ্যে কোনো একটা বিষয়ে মতবিরোধ হয়েছে, এর মানে তাদের প্রত্যেকটা বিষয়ে মতবিরোধ হয়ে গেছে এমন নয়। যেই বিষয়ে মতবিরোধ হয়েছে তা বাদ দিলেও এমন অনেক বিষয় আছে যাতে আমরা একমত। আমরা সেসবকে সামনে রেখেও তো কথা বলতে পারি, সম্পর্ক রক্ষা করতে পারি। বুদ্ধিমান মানুষ কি ঠিক এই কাজটিই করবে না?

আরেকবার এমন দুই লোকের সাথে পরিচয় হয় যারা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। এরপরও তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল, এবং অকৃত্রিমভাবেই তারা একে অপরের সাথে থাকতেন। আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, ‘মতাদর্শের পার্থক্য থাকার পরেও আপনারা কীভাবে একসাথে থাকেন?’ তাদের একজন বললেন, ‘আমরা এই বিষয়ে একমত যে আমাদের মধ্যে মতবিরোধ আছে!’

এই ঘটনা এই শিক্ষা দেয় যে মানুষ মতবিরোধের মধ্যেও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথ খুঁজে নিতে পারে।