breking news

কোরবানি ঈদে ব্যস্ততা বেড়েছে কামারদের

জাতীয় ধর্ম বিনোদন

‘এই সারা বছর কোনো বিক্রি নাই, কিছু নাই। সারা দিনে মিলে অয়তো ২০০-৩০০ টাকার দোয়ানদারী (দোকানদারি) অয়। যা একটু দোয়ানদারী এ ঈদের সময়। বছর ধরি দোয়ান ভাড়া, অরে রাখছি তার বেতন, চইলতে কষ্ট। না হারি (পারি) থাইকতে, না হারি ধাইতে (খেতে)।’ কাজের ফাঁকে প্রতিবেদকের সঙ্গে নিজেদের দুর্দশার কথা বলছিলেন কামার শম্ভুকুমার।

ঈদুল আজহার আর তো মাত্র কয়েকটি দিন বাকি। এখন তড়িঘড়ি চলছে কোরবানির প্রস্তুতি। তার মধ্যেই বেড়েছে কামারদের ব্যস্ততা। একদিকে কোরবানির পশু কেনায় ব্যস্ত স্বচ্ছল পরিবারগুলো, অন্যদিকে প্রায় কয়েকগুণ বেশি সমানুপাতিক হারেই দা, বটি, চুরি কিংবা কুরবানির পশু কাবু করার অস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কামাররা।

ঈদ আসার ১০-১৫ আগ থেকেই এই ব্যস্ততা বাড়ে। চলে ঈদের আগের শেষ রাত পর্যন্ত। সরেজমিনে ফেনী জেলার মফস্বল এলাকায় বেশ কয়েকটি কামার দোকানে ঘুরে দেখা গেছে আগের তুলনায় কাজ বেড়েছে কামারীদের। অথচ সারা বছরই তাদের কাটে অলস সময়।

দোকান ভাড়া, দোকানে পন্য সামগ্রির জন্য খরচ করা পুঁজি সব কিছু নিয়েই কোরবানির ঈদের জন্য একান্ত চিত্তে অপেক্ষার প্রহর গুণে কামার দোকানের কর্মচারীরা। পুরো বছর অত্যন্ত নিম্ন আয়েই তাদের কাটাতে হয় দিন। কেউ কেউ পাইকারি পণ্য দিয়ে কিছুটা অলস সময়ে নিজেদের ব্যস্ত রাখার ও চেষ্টা করেন।

কোরবানির ঈদ ছাড়া বাকি ধান কাটার মৌসুমে কাঁচি তৈরি কিংবা কাঁচিকে ধাঁরালো করার কাজে কিছু উপার্জন হয় তাদের। দোকানিরা বলছেন, ঈদ আসায় তাদের ব্যস্ততা অনেক বেড়েছে। আগে হয়তো সকাল ১০টায় ধীরে সুস্থে দোকান খুলতো। রাত গড়াতেই পরিবেশে নির্জিবতা নেমে আসলে বন্ধ করে ফেলতো দোকান।

তবে ঈদ মৌসুমে সকাল ৮টা থেকেই তাদের কর্মযজ্ঞ শুরু হয় আর চলে মধ্য রাত অব্দিও। এমনকি ঈদের আগের রাতেও তারা সারারাত অব্দি জেগে কাজ করেন। এ সময়ে কিছুটা মোটাদাগে ইনকাম কমবেশি সবারই হয়।

জানা যায়, সব কিছু মিলিয়ে ঈদ মৌসুমে শম্ভুনাথের ইনকাম ৩০-৩৫ হাজারের মতো। তবে দিন প্রতি তার ৩-৬ হাজার টাকার মতো উপার্জন হয়। কারো কারো এর চেয়ে কম বা বেশিও হতে পারে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি ছোট ও বড় ছুরি ধারালো করার কাজে কামাররা মজুরি নিচ্ছেন ৩০-৫০ টাকা। কেউ কেউ ৫০-১০০ করেও নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। আবার একটি বটি কিনতে ক্রেতাদের ৩০০-৫০০ টাকার অংক গুনতে হয়।

একই সঙ্গে একটি তৈরিকৃত নতুন দা কিনতেও সমপরিমাণ অর্থ গুনছেন ক্রেতারা। তবে টাকার অংক ঈদ মৌসুমে বেড়ে বা কমে যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক কামাররা। কাজ অনুযায়ীই তারা মজুরি আদায় করেন। সময়ভেদে অর্থ বাড়িয়ে নেন না বলেই স্বীকার করছেন তারা।

দেখা যায়, প্রায় সব কামারের দোকানেই লোহার সামগ্রী থরে থরে সাজানো। ক্রেতাদের অনেকে আবার নিজস্ব ধাতব পদার্থ নিয়ে আসছেন দা-বটি তৈরি করতে। কেউবা নিচ্ছেন কিনে। তবে দা বটির চাহিদা থাকা সারা বছরই।

কোরবানি ঈদের আগ মুহুর্তে দা-বটির কেনাবেচা বাড়লেও নতুন মাত্রা যোগ করে নানা আকারের ছুরি, ধামা, রামদা ইত্যাদি সামগ্রী। সারা বছর বিক্রি না হওয়ায় ছুরি, ধামা, রামদা ইত্যাদি অল্প দাম হলেও ছেড়ে দেন বলেই জানা গেছে।

এদিকে কামার পেশার চাহিদা কমছে দিন দিন। নতুন করে এ পেশায় আসছেন না নতুন শম্ভুকুমাররা। সারা বছরের বিক্রিহীন সময় কাটানো, মৌসুমভিত্তিক ব্যবসায় সিমিত পরিসরে লাভ ইত্যাদি কারণে এই পেশার গুরুত্ব কমছে।

দেখা গেছে, পূর্বে প্রতি বস্তা কয়লা কামাররা ১০০ টাকায় কিনতেন। বর্তমানে বস্তাপ্রতি সেই কয়লা তারা কিনছেন ২২০০ টাকায়। যদিও তার সাথে মজুরিও বাড়ছে।