জেনারেটরের ধোঁয়ার কারণেই সিলেটে ৩ প্রবাসীর মৃ’ত্যু

প্রবাস

সিলেটের ওসমানীনগরে ৩ প্রবাসীর লাশে কোনো রাসায়নিক বা বিষক্রিয়া পাওয়া যায়নি, এটি একটি দুর্ঘটনা। জেনারেটরের ধোঁয়া ও অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে তাদের মৃ’ত্যু হয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিলেটের বিদায়ী পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।

তিনি বলেন, ২৫ জুলাই রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় দীর্ঘক্ষণ (প্রায় ২ ঘণ্টা) জেনারেটর চলছিল। রুমের ভেতর কোনো ভেন্টিলেটর ছিল না। যে কারণে জেনারেটরের ধোঁয়া রুমের ভেতরে আস্তে আস্তে প্রবেশ করে। আর জেনারেটরের ধোঁয়ার কারণে অক্সিজেন স্বল্পতায় প্রবাসী পরিবারের পাঁচ সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের উদ্ধার করে
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে প্রথমে বাবা ও ছেলের মৃ’ত্যু হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়ে সামিরারও মৃ’ত্যু হয়।
এসপি আরো বলেন, তিন প্রবাসীর লাশে রাসায়নিক বা বিষক্রিয়ার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তাদের বাইরে থেকে এসেও কেউ মারেনি। তদন্তে প্রবাসী পরিবারের স্বজন ও আশপাশের সংশ্লিষ্ট সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদে পূর্ব-শত্রুতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাহলে তারা মারা গেলেন কীভাবে? এই প্রশ্নকে সামনে রেখে তদন্ত চালায় পুলিশ। অবশেষে আলামত হিসেবে একমাত্র জেনারেটরের ধোঁয়া ছাড়া আর কোনো ক্লু মেলেনি।

এসপি ফরিদ বলেন, দীর্ঘক্ষণ জেনারেটর চালু থাকায় ধোঁয়ায় অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দেয়। ফলে শ্বাস নিতে না পেরে দম বন্ধ হয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ও তার ছেলে মাইকুলের মৃ’ত্যু হয়। অচেতন হয়ে পড়েন স্ত্রী এবং অপর দুই ছেলে মেয়ে পরে তাদের উদ্ধার করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়ে সামিরাও মারা যান। জেনারেটরের ধোঁয়া থেকে দেশের অন্য একটি স্থানেও ৪/৫ জনের মৃ’ত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

তিনি বলেন, ১২ জুলাই রফিকুল পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন। ১৮ জুলাই তাজপুর স্কুল রোড এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন তারা। ২৫ জুলাই রাতের খাবার খেয়ে স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাসার একটি কক্ষে শুয়ে পড়েন। পর দিন তাদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রফিকুল ও তার ছেলে মাইকুলের মৃ’ত্যু ঘোষণা করেন। তাদের মধ্যে সামিরাকে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে সামিরাও মারা যায়। এ ছাড়া প্রবাসীর স্ত্রী হোসনে আরা এবং বড় ছেলে সাদিকুল সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এখন তারা বাড়িতে আছেন।

তিনি বলেন, আমরা সর্বাত্মক পেশাদারিত্ব বজায় রেখে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছিলাম। হাসপাতাল থেকেও বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছিল। এগুলোর কেমিক্যাল বিশ্লেষণ প্রতিবেদন ইতোমধ্যে ওসমানী হাসপাতালে এসেছে। সেখানে বোর্ড গঠন করা হয়েছে, দু-একদিনের মধ্যে প্রতিবেদন পাব।

এসপি ফরিদ উদ্দিন বলেন, এখনো পর্যন্ত আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে বলতে পারি, এ ঘটনাটি একটি দুর্ঘটনা। আমাদের সব উইংয়ের তদন্তে কোনো বিষক্রিয়ার বিষয়বস্তু পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ১২ জুলাই রফিকুল ইসলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেন। ঢাকায় একসপ্তাহ থেকে বড় ছেলে সাদিকুলের চিকিৎসা শেষে গত ১৮ জুলাই তাজপুর স্কুল রোডে চারতলা বাসার দু’তলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলামের পাঁচ সদস্যের পরিবার। ২৫ জুলাই রাতের খাবার খেয়ে স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলেদের নিয়ে বাসার একটি কক্ষে রফিকুল এবং অপর দুটি কক্ষে শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও শ্যালকের মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে বাসার অন্যান্য কক্ষে থাকা আত্মীয়রা ডাকাডাকি করে রফিকুলদের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ‘৯৯৯’ নাম্বারে ফোন দেন রফিকুলের শ্যালক দিলওয়ার। খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ওসমানীনগর থানা পুলিশের একটি দল গিয়ে দরজা ভেঙে অচেতন অবস্থায় পাঁচ যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।