‘তালাটা কি লাগিয়েছিলাম?’ এমন ভুল কী আপনারও হয়, তাহলে যা করবেন

‘তালাটা কি লাগিয়েছিলাম?’ এমন ভুল কী আপনারও হয়, তাহলে যা করবেন

Uncategorized রকমারী

ধরা যাক, আপনি লম্বা ছুটিতে ঘুরতে যাচ্ছেন। সব গোছগাছ করে রওনা হলেন রেলস্টেশনের পথে। রাস্তার মোড় অবধি পৌঁছাতেই হঠাৎ মনে হলো, ‘আরেহ! তালাটা কি লাগিয়েছিলাম?’ কিংবা ‘গ্যাসের চুলাটা কি নিভিয়েছিলাম?’ বাসায় ফিরে গেলেন আপনি। দেখলেন, সব ঠিকঠাক।

স্বস্তির শ্বাস ফেলে স্টেশনের পথে রওনা হলেন আবার। অর্ধেক পথ যেতে না যেতেই ফিরে এল আরেক দুশ্চিন্তা, ‘বাথরুমের পানির কলটা বন্ধ করা হয়েছিল তো!’ এদিকে ট্রেনের সময় হয়ে আসছে। এখন যদি আবার বাসায় গিয়ে ‘চেক’ করতে হয়, তাহলে ট্রেন মিস হবে। বাধ্য হয়ে মনকে হয়তো ‘বুঝ’ দিলেন, কিন্তু এই দুশ্চিন্তা আপনাকে কুড়ে কুড়ে খেলো ছুটির প্রতিটা দিন।এমন ঘটনা কিন্তু ঘটতে পারে রোজকার জীবনেও। অফিসে যাওয়ার সময় কিংবা অফিসের কোনো কাজের ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন আপনি।

একটি কাজ করার পরও দুয়েকবার তা ‘চেক’ করাটা কিন্তু একেবারেই অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে এই বারবার ‘চেক’ করার চক্রে ঘুরপাক খেতে খেতে যদি দৈনন্দিন জীবনে কোনো প্রভাব সৃষ্টি হয়, তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন, এমনটাই বলছিলেন ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রশিদুল হক।

মনে এমন সন্দেহ সৃষ্টি হলে মানসিক চাপ কমিয়ে আনার পরামর্শও দিলেন তিনি। রোজ ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। সময়মতো ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। মনকে ধীরস্থির রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করা কিংবা ধ্যান করা দারুণ অভ্যাস। রোজ অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চাও করতে হবে। এমন সুনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে মানসিক চাপ কমে আসে।পরিস্থিতি কখনো কখনো এমন হয়ে দাঁড়ায় যে আর সব বাস্তবতাই মনে হয় তুচ্ছ।

একজন এসএসসি পরীক্ষার্থীর কথাই ধরা যাক। পরীক্ষার হলে বসে বেচারির যাবতীয় চিন্তা রেজিস্ট্রেশন নম্বর পূরণ করা নিয়ে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মোকাবিলা করার চাইতে এই কাজ সঠিকভাবে সারতে পারাটাই যেন তার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। উত্তরপত্রে লিখতে লিখতে সে বারবার পাতা উল্টে প্রথম অংশে ফিরে যায়, রেজিস্ট্রেশন নম্বরটা ঠিকভাবে পূরণ করেছে কি না, দেখতে থাকে।

এদিকে সময় পেরিয়ে যায়। ফলে সব প্রশ্নের উত্তর জানা থাকা সত্ত্বেও ঠিকভাবে সে লিখতে পারে না। এমনটা হলে কিন্তু বড্ড মুশকিল।যেকোনো বয়সে, নারী-পুরুষ যে কেউই যেকোনো বিষয় নিয়ে এমন সমস্যায় পড়তে পারেন। জেনে নিন, কখন যাবেন চিকিৎসকের কাছে?যেকোনো একটি কাজ নিয়ে মনে অতিরিক্ত সন্দেহ সৃষ্টি হওয়া, সন্দেহ দূর করতে সেই কাজ করা হয়েছে কি না, অনেকবার ‘চেক’ করা কিংবা এভাবে ‘চেক’ করতে করতে সারা দিনে এক ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় করা বা স্বাভাবিক কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটার মতো সমস্যা দেখা দিলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

তিনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সাইকোথেরাপি এবং ওষুধের নির্দেশনা দেবেন।তা ছাড়া যখন বিষয়টি সমস্যার পর্যায়ে চলে যায়, তখন আপনার মধ্যে দুশ্চিন্তা কিংবা হতাশার কিছু উপসর্গও দেখা দিতে পারে। আপনি প্রায়ই অস্থিরতা বোধ করতে পারেন, দুশ্চিন্তার মুহূর্তে আপনার হাত-পা ঘামতে পারে কিংবা বুক ধড়ফড় করতে পারে। আপনি হতাশায় ভুগতে পারেন, বিষণ্ন বোধ করতে পারেন।

আপনার খাবার রুচি কমে যেতে পারে কিংবা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।